দর্পণ ডেস্ক : প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে গাছ ও ঘরচাপা পড়ে বাংলাদেশের চার জেলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি। এছাড়া, দুইশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
বরগুনা
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়ার খাল এলাকায় আজ (শনিবার) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘরচাপা পড়ে দাদি ও নাতির মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- নুরজাহান বেগম (৬০) কালিয়ার খাল এলাকায় আব্দুল বারেকের স্ত্রী ও তার নাতি জাহিদুল ইসলাম (৮)।
ভোলা
ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে আজ ভোরে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় ঘরচাপা পড়ে রানী বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে দৌলতখানের মদনপুর এলাকায় ঝড়ে ২০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গাছচাপায় মো. হাবিব নামে আহত এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার রাত ৩টার দিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। মো. হাবিব কুয়াকাটা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরা গ্রামের হারুন মুসুলির ছেলে।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সূর্বণচরের মেঘনা নদীর তীর সংলগ্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে ফণীর অগ্রভাগ থেকে সৃষ্ট প্রবল ঝড় বৃষ্টিসহ আঘাত হানে। এতে বিভিন্ন ইউনিয়নে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ঘরচাপা পড়ে চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে এক শিশু নিহত হয়। এছাড়াও ঝড়ের প্রভাবে চর জব্বর ইউনিয়নে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলার চরগজারিয়া, তেলিরচর, বয়ারচর, চরআবদুল্লাহ এলাকায় প্রায় শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। গত রাত ১২টা পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। কমলনগরে মাতাব্বরনগর এলাকায় নদীর তীররক্ষা বেড়ি বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। অপরদিকে মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ার ও প্রবল ঢেউয়ে নিমাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের কয়েক লাখ মানুষ।
চাঁদপুর
চাঁদপুরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডবে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। শনিবার ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে উপড়ে গেছে ওই এলাকার গাছপালাও। তবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন শতাধিক পরিবার।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে আজ সকালে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে এটির অবস্থান মধ্যাঞ্চলে। ঝড়টি বর্তমানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, ঢাকা অঞ্চলে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৫-৬ ঘণ্টা আরো বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করবে ঝড়টি। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ফণী। আগামীকাল বিকেলের থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হবার সম্ভবনা রয়েছে। এরপর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক হয়ে ভারতের আসাম মেঘালয়ে প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। উত্তাল রয়েছে সাগর। বন্ধ রয়েছে সব ধরণের নৌ যান চলাচল। চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ ও একই সংকেত রয়েছে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং আশপাশের চরগুলোতে। আর কক্সবাজার বন্দরকে আগের মতোই ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।