গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম চাপলি গ্রামে এক গৃহবধূকে গণধর্ষনের ঘটনায় মহিপুর থানা কে মামলা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার ভিকটিমের স্বামী মো: সিদ্দিক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গনধষর্নের অভিযোগে মামলা দায়ের করার পর বিজ্ঞ পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা এ আদেশ প্রদান করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে ধূলাসার ইউনিয়নের পশ্চিম চাপলী গ্রামে সন্ত্রাসী শাহ আলম, শাহিন, রবিউল, আল-আমিন, আ: রশিদ ও শাকিল মৃধা সহ অজ্ঞাত ৭/৮ যুবক ওই গৃহবধূকে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষন করে। এ সময় তার স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে নির্যাতিত গৃহবধূকে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।
ভিকটিমের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছে পরিবার সূত্র।
বখাটে চক্র ওই গৃহবধু (৩০) কে সোমবার রাত নয়টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা আটকে গণধর্ষণ শেষে অন্য এলাকার মেম্বার আনোয়ার ফকিরের বাড়িতে রেখে যায়। ওই রাতেই স্বামী মো.সিদ্দিককে এবং মঙ্গলবার সকালে স্ত্রীকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে মনো কাউন্সিল শেষে ভিকটিমকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল এর প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইদ্রিস আলম মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আইনি সহায়তার জন্য পাঠিয়েছেন। আর স্বামী সিদ্দিক কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নির্যাতনের শিকার গৃহবধু (৩০) জানায়, রাত সাড়ে আটটার পর তার খালা শ্বাশুড়ী বাসায় অতর্কিত ভাবে একদল যুবক প্রবেশ করে। এ সময় সে এ বাসায় কেন এসেছে জানতে চায়। গৃহবধু তার স্বামীর সাথে এসেছে জানালে যুবকরা তার বিয়ের কাবিন দেখতে চায়। খবর পেয়ে তার স্বামী কাবিনের কাগজ নিয়ে আসলেও এ বিয়ে মিথ্যা দাবি করে তাঁকে হাত-পা বেঁধে বেধরক মারধর শুরু করে।
এ সময় পরিবারের লোকজন বাঁচাতে এলে তাদেরও মারধর করে ফেলে রেখে। স্বামীকে মারধর শেষে যুবকরা পালাক্রমে প্রথমে ঘরের মধ্যে পরে পাশ্ববর্তী মাছের ঘেরে নিয়ে তাকে পালাক্রমে ধর্ষন করে। পরে সে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রাত ১২টার দিকে পাশ্ববর্তী গ্রামের ইউপি সদস্য আনোয়ার ফকিরের বাসায় গৃহবধুকে রেখে আসে। ইউপি সদস্য আনোয়ার ফকির জানান, সোমবার রাতে জনৈক মামুন তাকে ফোন করে জানান যে এক মহিলাকে তার বাসায় পাঠানো হচ্ছে। রাত সাড়ে ১১টার পর ওই মহিলা তার বাসায় আসেন। তার কাছে তখন ধর্ষনের কথা বলেন নি বলে জানান। কে তার বাসায় তাকে দিয়ে গেছে তা জানেন না।
কলাপাড়া হাসপাতালের ওসিসি’র প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইদ্রিস আলম জানান, ভিকটিম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তাদের কাছে আইনী সহায়তার জন্য এসেছেন। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা ও মনো কাউন্সিলিং করে ভিকটিমকে আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য মহিপুর থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা.রেফায়েত হোসাইন জানান, কলাপাড়া হাসপাতালে গাইনী চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে ভিকটিমের পরীক্ষা সম্ভব না।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে মনো কাউন্সেলিং শেষে ভিকটিমকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল এর প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইদ্রিস আলম মহিপুর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে আইনি সহায়তার জন্য পাঠালেও মহিপুর থানা পুলিশ তাকে কোনরকম সহায়তা প্রদান করেনি।
এদিকে ভিকটিমের স্বামী আহত সিদ্দিক জানায়, তার স্ত্রী সোমবার ঢাকা থেকে কলাপাড়ায় আসেন। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে খালা হাসিনা বেগম ও খালু মতিয়ার
রহমানের চাপলী গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। স্থানীয় একটি সন্ত্রাসীচক্র ঘটনার দিন রাতে ওই বাড়িতে দুই দিকের দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমে সিদ্দিকের কাছে জানতে চায় তার বিয়ে করা স্ত্রী এর কি প্রমাণ আছে ? এরপর সিদ্দিককে বেধড়ক মারধর করে হাত-পা বেধে বাড়ি সংলগ্ন বিলে নিয়ে রাখে। আর স্ত্রীকে
প্রথমে ওই ঘরে আটকে এবং পরে একটি মাছের ঘেরের ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল এর প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইদ্রিস আলম আমাকে বিষয়টি
জানিয়েছে। কিন্তু থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে কেউ না আসায় আইনী সহায়তাপ্রদান করা সম্ভব হয়নি।
পটুয়াখালীতে গৃহবধূকে গণধর্ষনের ঘটনায় মহিপুর থানা কে মামলা গ্রহনের নির্দেশ
পটুয়াখালীতে গৃহবধূকে গণধর্ষনের ঘটনায় মহিপুর থানা কে মামলা গ্রহনের নির্দেশ
Posted by Darpan Pratidin on Wednesday, 17 April 2019