ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর অভিযোগ, অধ্যক্ষ যে শুধু নুসরাত জাহান রাফির সঙ্গে এমন করেছেন তা না। আমাদের অনেকের সাথে এমন করেছে। ওনার একটা অভ্যাস ছিল এটা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৫দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত বুধবার রাতে না ফেরার দেশে চলে যান সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা নুসরাতকে তার কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন- এমন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার।
এরপর গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরা ওই ছাত্রীকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার দেওয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলে। সে রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ছাত্রীদের অভিযোগ, নুসরাতসহ একাধিক শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও মাদ্রাসা কমিটির কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় বেপরোয়া ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। আবার কোন প্রতিকার হতো না বলে ভয়ে অনেকে অভিযোগ করতেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এদিকে, ব্যর্থতার দায়ে মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ বাতিলের দাবি উঠেছে।
ছাত্রীরা বলছেন, ওনি যে শুধু নুসরাতের সঙ্গে এমন করেছেন তা না। আমাদের অনেকের সাথে এমন করেছে। ওনার একটা অভ্যাস ছিল এটা।
শুধু নুসরাত জাহান রাফি আর এই শিক্ষার্থীই নয়, সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার এই অধ্যক্ষের হাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কীভাবে যৌন হয়রানির শিকার হতো তারই বর্ণনা। কোন প্রতিকার হতোনা বলে অনেকে অভিযোগ করতেও আগ্রহ হারায় ভয়ে। শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়ন-সহিংসতা রোধে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা ২০১০ সালে প্রণীত হয়।
সেখানে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন-নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন, কমিটি গঠন এবং এসব তথ্য সব শিক্ষার্থীকে জানানোর বিধান আছে। আর এ নির্দেশনার বাস্তবায়ন চান এই আইনজীবী।
ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শাহিনুজ্জামান বলেন, যদি প্রশাসনের নজরদারীতে এসব কমিটি থাকতো তাহলে এমন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করতে সহায়ক হতো।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ফেনী জেলা শাখার এই নেতা মনে করেন, অভিযোগ পেয়েও অভিযুক্ত সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ব্যবস্হা না নেয়ায় মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করা উচিৎ।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী বলেন, অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
অন্যদিকে ফেনীর জেলা প্রশাসক জানান, নুসরাতকে শ্লীলতাহানি ও গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় তদন্তে দায়ী হলে মাদ্রাসা কমিটির বিরুদ্ধে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহেদুজজামান বলেন, গভর্নিং বডি নিয়ে যে কথা হয়েছে, যদি তাদের কোনো গাফিলতি থাকে তাহলে সেটা আমরা দেখবো। রিপোর্ট পাওয়ার পরে জানা যাবে যে কার কোথায় গাফিলতি ছিল।
উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার বলা হয়েছে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন বিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। পাঁচ সদস্যের এই কমিটির প্রধান হবেন একজন নারী। এছাড়া কমিটিতে আরো একজন নারী সদস্য থাকবেন। এর মেয়াদ হবে দু’বছর।