জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় রাতে ছাত্রীদের এনে নৃত্য করানোর ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

গত সোমবার রাতে উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। এ নিয়ে বুধবার দর্পণ প্রতিদিন সহ বিভিন্ন পত্রিকায় ‘শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের এনে নৃত্য’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়।

প্রতিবেদনটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী ইউএনও মো. মাশফাকুর রহমান শুক্রবার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন।

ইউএনওর ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছেন। দুর্যোগপূর্ণ এবং রাঙ্গাবালীর মতো বিদ্যুৎবিহীন জনপদে এ ধরনের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংকটে ফেলতে পারে।

এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে এ ধরনের আয়োজন করলে শিক্ষার্থীদেরও নিয়মিত পড়াশোনায় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া যতদূর মনে হয় ওই প্রতিষ্ঠানে স্কুলকক্ষে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পরিবেশ, আবহ বা প্ল্যাটফর্ম ছিল না।

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়, ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো প্রতিষ্ঠান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় শতভাগ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কোনো শিক্ষার্থীদের স্কুলের পাঠদান সময়ের বাইরে কোনো ব্যক্তিগত আয়োজনে সংশ্লিষ্ট না করতে সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। এ ধরনের অনুষ্ঠান যাতে কোনো রকম পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে পরামর্শ দেয়া হয়।

এ ছাড়া অপ্রীতিকর বা অনভিপ্রেত ও নিরাপত্তাহীন কোনো ঘটনার সম্ভাবনা সৃষ্টি যেন না হয়- সে জন্য জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কী ধরনের নির্দেশনা দেয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

এর আগে গত বুধবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের কাছে ঘটনাটির ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে এমন নৃত্য পরিবেশনের আয়োজনের কারণ, যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখসহ বৃহস্পতিবার ইউএনওর কাছে উপস্থাপনের জন্য বলা হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘ভিডিও দেখে এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞেস করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নৈশভোজ ও রাত্রিযাপনের জন্য মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান। তাকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান সেখানে নিয়ে যান।

ওই রাতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খানসহ কয়েকজন শিক্ষক আশপাশের ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি থেকে জরুরি ভিত্তিতে খবর দিয়ে আনেন।

সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে একটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ করে ওই কর্মকর্তাকে খুশি করতে হিন্দি ও বাংলা গান বাজিয়ে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করানো হয়।

এ সময় ওই কক্ষে বসে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন ও প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টুকুসহ কয়েকজন নৃত্য উপভোগ করেন।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে রাত ৯টায় অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নৈশভোজ করে ওই বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন করেন।