দর্পণ ডেস্ক : অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ (সোমবার) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায়। ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন নিহত ও ১৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ।

সভা শেষে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুশাসনগুলো হলো- ফায়ার সার্ভিসের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে এবং অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানোর পরামর্শগুলো মানা হচ্ছে কিনা সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। ভবনগুলোর অগ্নিনিরোধক সিস্টেম বা ক্লিয়ারেন্স প্রতি বছর নবায়ন করতে হবে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক সব ভবনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করতে হবে এবং এর কোনও ব্যত্যয় সহ্য করা হবে না। বিভিন্ন ভবন বা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ফায়ার ড্রিল করতে হবে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের কোনও উপায় আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ আগুনে পোড়ার চেয়ে ধোঁয়ার কারণেই বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে প্রায়ই পানির অভাবে আগুন ঠিকমতো নেভানো যায় না। এজন্যই আগুনের কথা মাথায় রেখে রাজধানীতে পর্যাপ্ত জলাশয় ও জলাধার তৈরি করতে হবে। রাজধানীর আশপাশের লেকগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, অগ্নিকাণ্ড বা অন্যান্য দুর্ঘটনায় ২৩ তলা পর্যন্ত পৌঁছানোর উপযোগী লেডার/লম্বা সিঁড়ি তিনটি আছে ফায়ার সার্ভিসের। এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাসাবাড়ি, অফিস বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে হবে চারপাশে দরজা-জানালাসহ এবং শত ভাগ ফায়ার এক্সিট নিশ্চিত করতে হবে। বৈদ্যুতিক দরজা পরিত্যাগ করে অন্য দরজা লাগাতে হবে যাতে বিদ্যুৎ না থাকলে বা দুর্ঘটনার সময় তা খোলা যায়। ভবনের চারপাশে জাল লাগানো সিস্টেম থাকতে হবে। কেউ যাতে ওপর থেকে পড়ে মারা না যায় সেজন্য এই ব্যবস্থা রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, হাসপাতাল ও স্কুলে অবশ্যই বারান্দা রাখতে হবে যেন কোনও দুর্ঘটনার সময় মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা জায়গা বাঁচাতে ভবনের ভেতর সব জায়গা বন্ধ করে ডিজাইন করে। এরকম কোনও ডিজাইন করা যাবে না। মানুষ যেন অবাধে যাতায়াত করতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। যে কোনও ভবনে আশা-যাওয়ার জন্য একাধিক দরজা রাখতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে গণপূর্তমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২৪টি টিম রাজধানীর প্রতিটি ভবন পরিদর্শন করার কাজ শুরু করেছে। এসময় ভবনগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা তা তারা দেখবে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেবে।

এদিকে, বনানীর এফ আর টাওয়ার নির্মাণে রাজউক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ (সোমবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি রাজউকের অনিয়মের ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এখন এটা সরকারের ওপর নির্ভর করে তারা রাজউকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কিনা।