গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুই দিন আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ ৭ (সাত) জনকে বহিস্কার করেছে।

তবে অনেকের মতে নির্বাচনী মাঠ ক্রমশ: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এসএম রাকিবুল আহসান এর নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় নতুন ’বহিস্কার নামক’ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে দলের রাকিবুল সমর্থক একাংশের নেতা-কর্মীরা। আর নতুন এ নির্বাচনী কৌশলে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা আকতারুজ্জামান কোক্কা, দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবদুল মালেক আকন সহ কয়েক নেতা-কর্মীকে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কার করা হয়েছে মর্মে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুলতান মাহমুদ স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজ শুক্রবার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয় রাকিবুল অনুসারী এক যুবলীগ নেতা। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য ফেসবুক সহ
শুক্রবার শহর জুড়ে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়।

ক্ষমতাসীন দলের জেলা কমিটি সূত্র বলছে কেন্দ্রীয় কোন সিদ্ধান্ত কিংবা কোন রকম চিঠি ছাড়াই এটি করা হয়েছে। আর বহিস্কার সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তির নামের তালিকায় থাকা যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবদুল মালেক আকন বলেন, ’সুলতান মাহমুদ-রাকিবুল লীগ আমি করিনা। আমি আওয়ামীলীগ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশ রতœ শেখ হাসিনার। সাবেক সাংসদ মাহবুব ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাকিবুল আহসান ও সুলতান মাহমুদ মিলে বর্তমান সাংসদ মহিব্বুর রহমানের লোকজনকে বেকায়দায় ফেলতে এ চক্রান্ত করছে।’

মহিপুর শ্রমিক লীগের সাবেক আহবায়ক সোহাগ আকন বলেন,’ বহিস্কার সংক্রান্ত
একটি বিজ্ঞপ্তি ফেইসবুকে মহিপুর যুবলীগের আহবায়ক বুলেট আকনের পোষ্টে দেখেছি। দলের হাই কমান্ডের কোন নির্দেশনা ছাড়াই ব্যক্তি স্বার্থে এটি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিক লীগের অভিভাবক কমিটি হিসেবে জেলা কমিটি রয়েছে।’

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় দলীয় কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। এছাড়া স্থানীয় সংসদ মহিব্বুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনকে ইস্যু করে মহিব্বুর রাহমান অনুসারী নেতা কর্মীদের বিপাকে ফেলতে ’নৌকা প্রতীতের’ পক্ষ বিপক্ষ বানিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চক্রান্তের কথা বলছেন দলের স্থানীয় একাধিক সূত্র। এমনকি গণমাধ্যমেও ’নৌকার বিপক্ষ করছেন স্থানীয় সাংসদ’ এমন সংবাদ পরিবেশন করিয়েছে তার রাজনৈতিক বিপক্ষ শিবির।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহিপুর শেখ রাসেল ব্রীজ এলাকায় যুবলীগ নেতা বুলেট আকন ও তার চাচাতো ভাই শ্রমিকলীগ নেতা সোহাগ আকনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে হয়। এতে আহত সফিকুল ইসলাম মুন্না নামের এক কিশোর জখম প্রাপ্ত হয়। সংঘর্ষের এ ঘটনার পর বুলেট আকনের পক্ষ থেকে এটিকে নৌকার মিছিলে হামলা করা হয়েছে বলে প্রচার করে মহিপুর শেখ রাসেল কিশোর সংঘে ভাঙচুর করা হলেও পুলিশ বলছে এটি নির্বাচনী কোন বিষয় নয়। এছাড়া উপজেলার ধানখালীতে শুক্রবার সকালে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা বশির ঢালি (৪০) নামের আনারস প্রতীকের এক সমর্থককে কুপিয়ে জখম করেছে।

মহিপুর থানার ওসি মো: সাইদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতের বিষয়টি বুলেট আকন ও সোহাগ আকনেরে স্রেফ ব্যক্তিগত ও দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধের জের। এটি নির্বাচনী সহিংসতার কোন বিষয় নয়। আর ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানান।

প্রসংগত; উপজেলা নির্বাচনের মাত্র ৩৬ ঘন্টা পূর্বে নির্বাচনী মাঠ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নৌকা প্রতীক ও স্বতন্দ্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা। ৭৪টি কেন্দ্রের ভোটারদের তালিকা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের নাম বের করার প্রক্রিয়া চলছে। এর পর পক্ষ হলে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করা আর বিপক্ষ হলে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা প্রদানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে
বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।