জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নিজ কক্ষে প্রসবের পর সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে বাক্সে তালাবন্দি করে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এক ছাত্রী।
লুকিয়ে প্রসবের পর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি হাসপাতালে যান। বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে ফুটফুটে নবজাতককে বাক্স থেকে উদ্ধার করা গেলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুপুর আড়াইটার দিকে বান্ধবী ও হল প্রশাসনকে প্রসব বেদনার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী হাসপাতালে যান।
কিন্তু রুমের একটি ট্রাঙ্ক থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। এরপর প্রশাসন তালা ভেঙে ট্রাঙ্ক থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে মেডিকেলে ভর্তি করে। পরে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে নবজাতক মারা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন সহকারী প্রক্টর মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, মা-মেয়ে দু’জনই আশঙ্কাজনক (ক্রিটিক্যাল) অবস্থায় ছিল। রাত পৌনে ১০টার দিকে বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে। মায়ের শারীরিক অবস্থাও ভালো না। ছাত্রীটি বিবাহিত কিনা, জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর জানান, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হল সূত্র জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে ছাত্রীটি সন্তান প্রসব করে কাউকে না জানিয়ে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখে। এরপর রুমমেট এলে তাকে শুধু প্রসব বেদনার কথা জানায়।
প্রসব বেদনার কথা শুনে চিকিৎসা কেন্দ্রের নার্স এসে ছাত্রীকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। এরপর তাকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়।
ছাত্রীটি চলে যাওয়ার পর ওই কক্ষ থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে নবজাতককে উদ্ধার করে হল প্রশাসন।
বাচ্চার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং শরীর নীল বর্ণ ধারণ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে (মায়ের কাছে) নেয়া হয়।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ জানান, বাচ্চাকে যখন মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় তখন তার শরীর সম্পূর্ণ নীল রং ধারণ করেছিল। তাকে অক্সিজেন দিয়ে স্বাভাবিক করে মায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে হলে যাই। ছাত্রীরা বলছিল কক্ষ থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
ওই কক্ষে গিয়ে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে বাচ্চাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যাই। তিনি আরও বলেন, তথ্য গোপন করে ছাত্রীটি অপরাধ করেছে।
বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (সন্ধ্যায়) জানান, ‘বাচ্চাকে যখন মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় তখন তার শরীর সম্পূর্ণ নীল রং ধারণ করেছিল। পরে তাকে অক্সিজেন দিয়ে স্বাভাবিক করে মায়ের কাছে পাঠানো হয়।’
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, ‘ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে হলে যাই। ছাত্রীরা যখন বলছিলো ঘর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তখন ৪২৬ নং রুমে গিয়ে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে বাচ্চাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য গোপন করে মেয়েটি অপরাধ করেছে। এতে অনেক বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। এই ঘটনায় তদন্তের জন্য হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক লাবিবা খাতুন তানিয়াকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’