দর্পণ ডেস্ক : স্থানীয় সময় রবিবার (১০ মার্চ) সকাল পৌনে নয়টার দিকে ১৫৭ জন আরোহী নিয়ে আদ্দিস আবাবা থেকে নাইরোবি যাওয়ার পথে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। আদ্দিস আবাবার ৬২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বিশোফটু শহরের কাছে ফ্লাইট ইটি ৩০২ বিধ্বস্ত হয়। এটি বোয়িং ৭৩৭-৮০ ম্যাক্স বিমান ছিল। ফ্লাইটটিতে ৩০টিরও বেশি দেশের যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে কেরিয়ার ৩২ জন, কানাডার ১৮ জন ও ব্রিটেনের সাতজন। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্লাইটটিতে নিহত অন্তত ১৯ জন জাতিসংঘের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ৭৩৭ বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৫৭ জন নিহতের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ এর দ্বিতীয় দুর্ঘটনা এটি। রবিবারের আগে গত বছর অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের একই মডেলের একটি বিমান সবযাত্রী ও ক্রু নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল। চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দেশটির এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে এই মডেলের সব বিমান উড্ডয়ন না করার জন্য। এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বশেষ বিধ্বস্তের ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলার সময় এখনও হয়নি।

স্লোভাকিয়ার সংসদ সদস্য অ্যান্থন রঙ্কো জানিয়েছেন, বিমানটিতে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ছিলেন। দুর্ঘটনার ইথিওপিয়ায় জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

এয়ারলাইন কোম্পানি জানিয়েছে, বিমানটি নিয়ে জটিলতায় পড়েছিলেন পাইলট। তিনি আদ্দিস আবাবায় ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। সিইও তেওল্ডে জেব্রেমারিয়াম সাংবাদিকদের বলেছেন, এই অবস্থায় কোনও কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছি না।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, ফ্লাইটের দৃশ্যমান ভালো ছিল কিন্তু বিমান চলাচল নজরদারি করা ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, উড্ডয়নের পর বিমানটির উল্লম্ব গতি ছিল অস্থিতিশীল।

বিমানটির চালকের নাম সিনিয়র ক্যাপ্টেন ইয়ারেড গেটাচিউ বলে জানানো হয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, চালকের দক্ষতা অসাধারণ এবং ৮ হাজারের বেশি ঘণ্টা বিমান চালিয়েছেন।

৭৩৭ ম্যাক্স-৮ উড়োজাহাজটির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স তাদের ব্যবসার বিস্তৃতির জন্য যে ৩০ টি বিমান ক্রয় করছে তাদের মধ্যে কেনা ছয়টির একটি ছিল বিধ্বস্ত বিমানটি।

গত অক্টোবরে লায়ন এয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার পর তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের নতুন সুবিধা ইঞ্জিন থেমে যাওয়া রোধ করতে বিমানটির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নিয়ে জটিলতায় পড়েছিলেন পাইলট। এই ব্যবস্থার কারণে বিমানটির সামনের অংশ নিচের দিকে নেমে যায়, পাইলট তা সংশোধনের চেষ্টার পরও। ওই দুর্ঘটনায় ১৮৯ জন নিহত হয়েছিলেন। লায়ন এয়ারের উড়োজাহাজটিও ছিল নতুন এবং উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনায় পড়ে।

গত অক্টোবরের দুর্ঘটনার পর বোয়িং সবগুলো এয়ারলাইন কোম্পানিকে অ্যান্টি-স্টল ব্যবস্থা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সতর্ক করেছিল। রয়টার্স জানিয়েছিল, এই বিষয়ে বোয়িং একটা সফটওয়্যার প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল।

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সুনাম রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে লেবাননের বৈরুত ছেড়ে যাওয়ার পর ভূমধ্যসাগরে বিমানটির একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছিল।

এয়ারলাইন কোম্পানিটি জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত না হওয়ায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানের চলাচল অব্যাহত রাখবে।