দর্পণ ডেস্ক : বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু কারণ অজ্ঞাত রোগে নয়, বাঁদুড়বাহিত নিপাহ ভাইরাসে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি অনুসন্ধানী মেডিকেল টিম গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তদন্তকাজ পরিচালনা করেন। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবার, প্রতিবেশী, গ্রামবাসীর কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত ও নমুনা সংগ্রহ করেন দলের সদস্যরা।

রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সবার জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ওই নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট–এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রেডিও তেহরানকে জানান, শীত মৌসুমে বাঁদুড়ের শরীর থেকে রোগ জীবানু খেজুরের রসের মাধ্যমে ও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

আইইডিসিআরের তদন্ত দল প্রথম মৃত ব্যক্তির খেজুরের কাঁচারস পানের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলেও পরে আরও যে চারজন মারা যান, তারা প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অমল চন্দ্র সাহা বলেছেন, বাদুরে খাওয়া ফল বা খেজুরের রস খেয়ে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, গত ১৯ বছর ধরে দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে। ২০০১ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০৫ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি বলেন, কাঁচা খেজুরের রস পান করার ফলে যে কারো বাঁদুড়বাহিত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি হওয়ায় নীরবে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। তিনি কাঁচা খেজুরের রস পান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা এবং প্রয়োজনে রস আগুনে ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন।