দর্পণ ডেস্ক : “ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে।” দেশের মাটিতে পা রাখার পরই অভিনন্দনের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল এটি। ৫৮ ঘণ্টা পাকিস্তানের কবজায় থাকার পর শুক্রবার ভারতে ফিরেছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। ওই দিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে ওয়াঘা-অটারী সীমান্তে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান।
গোটা দেশ প্রহর গুনছিল কখন ঘরে ফিরবেন দেশের এই বীর সন্তান। তার ফিরে আসা নিয়েও দিনভর কম নাটক হয়নি। সকালেই খবর আসে ইসলামাবাদ থেকে সড়কপথে লাহোরে নিয়ে আসা হচ্ছে অভিনন্দনকে। দুপুর ২টার সময় ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু সেই সময়ও পেরিয়ে যায়। ফের জানা যায়, সাড়ে ৩টার সময় অভিনন্দন দেশে ফিরছেন। সেই সময়ও অতিক্রান্ত হয়ে যায়। অবশেষে রাত ৯টার পর ওয়াঘা সীমান্ত থেকে নীল ব্লেজার, সাদা জামা এবং ধূসর প্যান্টে হেঁটে আসতে দেখা যায়। দেশের মাটিতে পা রাখলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। স্বস্তি নেমে এলো গোটা দেশে। আনন্দবাজার।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাক সেনার হাতে আটক হন অভিনন্দন। এ খবর সামনে আসতেই গোটা দেশে একটা আশঙ্কার ছায়া নেমে আসে। পাকিস্তানে ভারতীয় যুদ্ধবন্দিদের ইতিহাস মনে পড়ে যাচ্ছিল অনেকেরই। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় পাক সেনার হাতে ধরা পড়া বিমান বাহিনীর আর এক পাইলট নচিকেতার উদাহরণই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু ভয় দেখাচ্ছিল অজয় আহুজার স্মৃতি।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কে নচিকেতা এবং স্কোয়াড্রন লিডার অজয় আহুজা। ১৯৯৯ সালের ২৭ মে, কার্গিল যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে পড়েছিলেন এই দু’জন। সে দিন কার্গিলের আকাশে নচিকেতার মিগ-২৭ বিমানের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। তিনি ‘ইজেক্ট’ করে বেরিয়ে আসতে পারলেও পাক সেনার নর্দার্ন ইনফ্যান্ট্রি বন্দি করে তাকে। তৎকালীন অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার গোপনে বিস্তর আলোচনা চালিয়ে রাজি করায় পাকিস্তানকে। রেড ক্রসের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয় নচিকেতাকে। কিন্তু অজয়কে বন্দি অবস্থায় হত্যা করেছিল পাক বাহিনী। বিমান বাহিনীর ভেঙে পড়া বিমানের এক চালককে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন তিনি। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অজয়ের বিমান। তিনি ‘ইজেক্ট’ করে নামতে পারলেও বন্দি হন। সে দিনই তাকে হত্যা করে পাক বাহিনী।
নচিকেতা ফিরলেও কী ভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল ওই বিমান বাহিনীর পাইলটের উপর, সেই ঘটনা আজও অনেকের মনে টাটকা। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা যেন অভিনন্দনের জীবনে নেমে না আসে দেশজুড়ে সেই প্রার্থনা চলছিল। নচিকেতা ধরা পড়ার আট দিন পর দেশে ফিরেছিলেন। অভিনন্দন ফিরলেন দু’দিন পর। কিন্তু সেই দু’দিনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করছিল দেশবাসীকে। পাকিস্তান অভিনন্দনকে আটক করার পরই ভেবেছিল তাকে ঢাল বানিয়ে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। সেই খেলায় কিন্তু বাজিমাত করল ভারতই। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও শর্ত ছাড়াই মুক্তি দিতে হবে তাকে।
পাশাপাশি, জেনেভা কনভেনশনের বিষয়টিও পাকিস্তানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেও চাপ আসতে শুরু করেছিল পাকিস্তানের উপর। শেষমেশ, পাক প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ভারতকে ‘শান্তির বার্তা’ দিতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত ছিল তার।
