দর্পণ ডেস্ক : গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাতে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে বহরের ৭০টি গাড়ির মধ্যে একটি বাস সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। প্রাণ হারান বাহিনীর অন্তত ৪৪ সদস্য। পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ওই হামলা সংঘটিত হয়েছে দাবি করে তখন থেকেই সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল ভারত।
সামরিক বাহিনী মিডিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গাফুর বলেন, ‘এবার আপনাদের পালা, চমকানোর জন্য প্রস্তুত হন।’ পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতের ২১ মিনিট অবস্থান করার দাবিও ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন তিনি। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত আমাদের আকাশে এসে ২১ মিনিট থেকে দেখাক, তারপর দেখবেন কি হয়।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পুরো বিশ্বের জন্য এই স্থান উন্মুক্ত রয়েছ। তারা দেখতে পারেন।’
নিরাপত্তা কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারত আগ্রাসন চালিয়েছে; পাকিস্তান অবশ্যই যথাযথ সময়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনও স্থানে এর জবাব দেবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণকে যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। ‘তিনি বিশ্বনেতাদের সামনে ভারতের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতি উন্মোচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’.
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন. মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-এর সঙ্গে কথা হয়েছে তার। মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি নেতাদের এই বিষয়ে অবহিত করেন। এছাড়া সুষমা বলেন, আমি খুশি যে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে সবগুলো দলই সমর্থন দিচ্ছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি বলেন, আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। কিন্তু তাই বলে আমাদের সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেছি। আমরা খুবই দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেব। আমরা আশা করি ভারতের এই আগ্রাসী আচরণের নিন্দা করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার হামলার পর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে দাবি করেন, ‘বালাকোটে জঈশের সব থেকে বড় জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত। জঈশ-এ-মোহাম্মদের বহু জঙ্গি, সিনিয়র কমান্ডার, প্রশিক্ষক নিহত হয়েছে।’ হামলায় নিহতদের মধ্যে মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজহারও ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। বিপরীতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিভাগের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘আরও একবার ভারত সরকার স্বার্থপরতা ও কল্পনাপ্রসূত দাবি করেছে। এটা সামনের নিবার্চনে জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায় তাদের অভ্যন্তরীণ কৌশল। আর এতে করে পুরো অঞ্চলেরই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।’
এদিকে হামলার পর দেশজুড়ে উৎসব শুরু করেছেন মোদি-সমর্থকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন কর্মসংস্থানের অভাব কিংবা নিম্ন আয়ের মতো ইস্যু এবার চাপা পড়ে যাবে। দেশপ্রেমের কারণে এই হামলা ভোটারদের মাঝে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম জরিপ প্রতিষ্ঠানে সিএনএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ভবেশ ঝা বলেন, যেসব বিজেপি সমর্থকরা দ্বিধান্বিত ছিলেন, তারা এখন স্বস্তিবোধ করবে। তিনি বলেন, ‘এই সমর্থকরাই এখন মোদিকে জেতানোর জন্য পরিশ্রম করবে। যেহেতু নির্বাচন খুব নিকটে, তাই পুলাওয়ামাই হবে সবচেয়ে বড় ইস্যু।’
এদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং এক বিবৃতিতে বলেন, চীন চায় ভারত-পাকিস্তান পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখুক। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাদের উচিত পরস্পরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং ভালো যোগাযোগ রাখা। এতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
লু ক্যাং বলেন, সন্ত্রাসবাদ বিশ্বজুড়েই একটি সমস্যা। এর দমনে আন্তর্জাতিভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নিশ্চিত করা জরুরি। দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখা। চীনের সরকার সমর্থিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, গত সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেই কথোপকথনেও চীনের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র মাজা কোচিজানকিক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি। আরও উত্তেজনা এড়িয়ে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করা দরকার। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকেও দুই দেশের প্রতি একই আহ্বান জানানো হয়েছে।
অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কথিত উপস্থিতি সম্পর্কে পদক্ষেপ নিতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন করে এমন যে কোনও পদক্ষেপ এড়াতে দুই দেশকেই সংযম প্রদর্শন করতে হবে।