দর্পণ ডেস্ক : পাশাপাশি, উচ্চ ভবন। সরু গলির মতো। আসলে ভবনের মধ্যবর্তী স্থান। মানুষ যেতে পারবে না, নিশ্চিত। তারই শুরুতে একটি শিশু।
শরীরে মেজেন্টা রঙের শীতের পোশাক। পরনে বেগুনির ওপর লাল-সাদা স্ট্রাইপের ট্রাউজার।পায়ে গোলাপি রঙের স্যান্ডেল, ওপরের অংশে ফুলের কাজ।
ডান হাত সামনে ঝুকিয়ে, বাম হাত একটু পেছনে রাখা। খালি চোখে মনে হবে, নিষ্পাপ শিশুটি গা এলিয়ে শুয়ে আছে, শীতে কারও উষ্ণতা পেতে।
কিন্তু এই একটি ছবিতেই যে একরাশ কান্না জড়িয়ে রয়েছে, তা শনিবার সকালেও কারও জানা ছিল না। জানতেন না তার প্রিয়জনেরাও। দুপুরে জানার পর ছোট্ট হালিমার এই ছবি এখন কাঁদাচ্ছে সবাইকে।
আড়াই বছরের হালিমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর ভূঁইয়াপাড়ার রাজমিস্ত্রি আমির হোসেনের মেয়ে। শনিবার সকাল ৭টার দিকে বাড়িতেই খেলছিল। হঠাৎ তার আর খোঁজ নেই। নেইতো নেই-ই!
এরপর কত সন্ধান। অলিগলি তছনছ। না পেয়ে মাইকিং— খবর চাই হালিমার। বয়স আড়াই। পরনে জামা-ট্রাউজার। আধো আধো গলায় বলতে পারে বাবার নাম আমির হোসেন, মা অমুক। কোনো সহৃদয়বান সন্ধান পেলে জানাবেন এই নম্বরে…।
মাইকিং চলার ফাঁকেই দুপুর পৌনে ১টার দিকে এল খবর, হালিমার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে, সে খবর বুকভাঙার। ছোট্ট হালিমার দেহ মিলেছে ভবনের ফাঁকে। মা-বাবা তো পড়িমড়ি করে ছুটে গিয়ে জেলা শহরের ভাদুঘর ভূঁইয়াপাড়া থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।
আদরের মেয়েকে বুকে চেপে বাবা আমিরের গগনবিদারী আর্তনাদ। মা তখই বারবার যাচ্ছেন মূর্ছা। এ দৃশ্য উপস্থিত অন্যদের চোখেও পানি। বাতাস ভারী, কারও মুখে শব্দ নেই। সবাই হালিমাকে দেখছেন আর বলছেন, কোন পাষণ্ড পারল এমন করতে?
ঘটনার বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, নিজ বাড়িতে খেলার সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিখোঁজ হয় হালিমা। পরে এলাকায় সন্ধান চেয়ে মাইকিং করা হয়। মাইকিং চলাকালেই স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিবার জানতে পারে, তাদের বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে দুটি ভবনের মধ্যবর্তী স্থানে পড়ে আছে হালিমার দেহ।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে কোনো রক্ত নেই। তার শরীরের কোথাও কাটাছেঁড়া নেই। আমরা ধারণা করছি, হালিমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর এখানে ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা।’
এ সময় তিনি আরও জানান এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের জন্য তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না বলে তিনি জানান।
তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিশু হালিমার মৃত্যুর কারণ আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে জানান পুলিশের এ পরিদর্শক।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানর ওসি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।