অনলাইন ডেস্ক : ‘তোমার প্রকাশ হোক কুজ্ঝটিকা করি উদ্ঘাটন/সূর্যের মতন।/রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।/উদয়দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে।/মোর চিত্ত-মাঝে/চির-নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ’- এভাবে চির-নতুনের মধ্যেই নিজের আবির্ভাবক্ষণকে অনুভব করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিজেকে যেমন উন্মোচন করতে চেয়েছেন সূর্যালোকে, তেমনি চেয়েছেন নতুনের মধ্য দিয়ে পুনর্জন্মের আস্বাদ পেতে। আমৃত্যু কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন হাজার বছরের পথিকৃৎ বাঙালি।

আজ পঁচিশে বৈশাখ, মঙ্গলবার। পথিকৃৎ সেই মানুষটির ১৫৭তম জয়ন্তী আজ। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু জমিদার পরিবারের ঐতিহ্যকে অতিক্রম করে জীবন ও কর্মের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় তিনি পত্তন ঘটান নতুন এক বসতি শান্তিনিকেতনের। মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা ব্রাহ্ম ধর্মগুরু ও জমিদার দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোল আলো করে পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসেন ১২৬৮ বঙ্গাব্দে। সারা জীবনই তার কামনা ছিল- ‘যা পেয়েছি প্রথম দিনে, তাই যেন পাই শেষে/দু’হাত দিয়ে বিশ্বরে ছুঁই শিশুর মতো হেসে।’

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের ঊর্ধ্ব সোপানে। ‘গীতাঞ্জলি’ রচনা করে ১৯১৩ সালে তিনি নিয়ে আসেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ভারতীয় চিত্রকলাকে আধুনিকতার ধারণায় উর্বর করেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দিতে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক, গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন। রাজপথে নেমে আসেন তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ছুড়ে ফেলেন ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি। এভাবে বার বার সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মতার ঘোষণা দিয়েছেন সমাজসচেতন রবীন্দ্রনাথ। তিনি পৃথিবীর একমাত্র গীতিকবি- যার রচিত ভিন্ন তিনটি সঙ্গীত ভিন্ন তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গীত হয়। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশে, ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ ভারতে এবং ‘নমো নমো মাতা’ শ্রীলংকার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি : রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশে কবির স্মৃতিধন্য শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসর ও দক্ষিণডিহি-পিঠাভোগে উদযাপিত হচ্ছে সরকারি আয়োজনে নানা অনুষ্ঠান। রাজধানীতেও সরকারি উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করবে। এ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ নিবন্ধ। সরকারি-বেসরকারি চ্যানেলগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

রবীন্দ্রজয়ন্তীর সরকারি মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী।

শিল্পকলা একাডেমি পূর্ববঙ্গে অবস্থানের সময় যেসব সাহিত্য রচনা করেছেন সেসব নিয়ে আয়োজন করেছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে থাকছে রবীন্দ্র মেলা। ছায়ানটে রয়েছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। বাংলা একাডেমি ইতিমধ্যে প্রদান করছে রবীন্দ্রপদক। এছাড়া আয়োজন করছে আলোচনা সভার। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে স্মরণ করবে কবি রবীন্দ্রনাথকে।