দর্পণ ডেস্ক : নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে নৌকার এজেন্ট মিলন মিয়া (৪৫) হত্যার ঘটনায় স্বতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও তার ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম মোল্লাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত মিলনের স্ত্রী পারভীন বেগম বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা বিদায়ী সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে প্রধান আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলো- আজিজুল হক (৩৫),বকুল মিয়া (৪০),আজিজুল (২৫), মো. সোহেল মিয়া (৩৮),পিয়াল হায়দার (২৫),আমজাদ (৩৫)। শিবপুর মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, তার ভাই তাজুল মোল্লাসহ তাদের লোকজন কুন্দারপাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করে জোরপূর্বক সিংহ প্রতীকে সিল মারার চেষ্টা করেন। এ সময় নৌকা প্রতীকের এজেন্ট মিলন মিয়া বাধা দেয়।
ওই সময় সিংহ প্রতীকের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও তার লোকজন মিলন মিয়াকে টানাহেঁচড়া করে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে যায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি মারপিটের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহাবুবু মৃধা জানিয়েছেন, বেলা ১১টার দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল হক ভূইয়া মোহন কেন্দ্র পরিদর্শনে করে চলে যায়। পরে দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। ওই সময় জালভোট দেয়ার অভিযোগ তুলে নৌকার সমর্থকরা সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে একটি কক্ষে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে আধা ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নিহত মিলন মিয়ার স্ত্রী পারভিন বেগম বলেন, আমার স্বামী সারাজীবন নৌকার জন্য জানপ্রাণ ছিল। এ কারণেই উনাকেই নৌকার এজেন্ট করা হয়। কিন্তু তাই কাল হলো। যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
নিহতের ছোট ভাই সাত্তার মিয়া বলেন, এমপি সিরাজ মোল্লার উপস্থিতিতে সিংহ প্রতীকের ব্যালটে সিল মারছিলেন। তা দেখে নৌকার এজেন্ট হিসেবে আমার ভাই বাধা দেয়। তখন এমপির লোকজন আমার ভাইকে ধাওয়া করে হত্যা করে।
অভিযুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এ মামলায় আমাকে এবং আমার ভাইকে জড়ানো হয়েছে। মূলত আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আমি চাই এ হত্যার প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করে সর্বচ্চো শাস্তি দেয়া হোক।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলার বাদী বুধবার সকালে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আমরা মামলার নম্বর দিয়ে রেখেছি। তবে অভিযোগপত্রে তথ্যগত ত্রুটি থাকার কারনে আমরা বাদীকে থানায় আসতে বলেছি। তিনি এখনো আসেনি।
নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার দিকে শিবপুরের কুন্দারপাড়ার ভোটকেন্দ্রের কাছ থেকে পুলিশ নৌকার এজেন্ট মো. মিলন মিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান শিবপুর আসনের সতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।