দর্পণ ডেস্ক : ইংরেজি নতুন বছর। সকালে নতুন বই। নতুন ঘ্রাণ। নতুন বছরের আনন্দের সঙ্গে বই উৎসবের আনন্দ।

বইয়ের একেকটি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে নতুন গল্প, কবিতা আর নতুন সব বিষয় জানার ইচ্ছাও প্রবল। তাইতো বই হাতে পেয়েই নিজেকে সামাল দিতে পারল না আদুরী, তাসনিম।

বন্ধুদের পেছনে ফেলে এক দৌড়ে ছুটে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এরপর বইয়ের ওপর নাক ঠেকিয়ে ছাপাখানার লেগে থাকা ঘ্রাণ শুকে নিল আদুরী। এ সময় তার চোখে মুখে দেখা মেলে দারুণ এক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।

মঙ্গলবার সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর রংপুর অঞ্চল এবং মাধ্যমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় দফতর আয়োজিত বই উৎসবে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সুমি আক্তার, হৃদিমা তাসনিমের মত এমন অসংখ্য শিক্ষার্থীকে নতুন বই হাতে উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে।

রংপুর বিভাগে প্রাথমিকের শিশুশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে বছরের প্রথম দিনেই পৌঁছে গেছে ৪ কোটিরও অধিক বই।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা রংপুর অঞ্চল উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা রংপুর অঞ্চল পরিচালক ড. একেএম সিরাজুল ইসলাম এ উৎসব আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সেনপাড়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই তুলে দেন রংপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পরে তিনি মহানগরীর কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ এবং আলমনগর নূরপুর এলাকাতে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত বিদ্যালয়ে বই বিতরণ করেন।

এদিকে নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত রংপুর জিলা স্কুলের মাহিম, আসিম, লামিম ও আনাম। ক্ষুদে এ শিক্ষার্থীরা জানান, ‘নতুন বইয়ের গন্ধ আমাদের খুব ভালো লাগছে। বছরের প্রথম দিন বই হাতে আনন্দ তো একটু বেশি লাগছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা।’

শালবন মিস্ত্রিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাইয়েদা খাতুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন বই তুলে দেয়া বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক সাফল্য। শিক্ষাব্যবস্থায় এটি একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাতে আগ্রহ বাড়বে।’

সারা দেশের মতো বই উৎসবে মাতোয়ারা ছিল রংপুর বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও প্রতিষ্ঠান পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্তত পৌনে ২৭ লাখ শিক্ষার্থী।

এ বছর রংপুর বিভাগের আট জেলার ১৮ হাজার ১৮৪টি বিদ্যালয়ে ৪ কোটিরও বেশি নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি নতুন বই পেয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মাধ্যমিকে ২ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৭টি, কারিগরি ট্রেডে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭১, দাখিলে ৪৯ লাখ ১১ হাজার ৬৩৮, এসএসসি ও ভোকেশনালে ৪৪ হাজার ৬০ এবং ইবতেদায়িতে ২৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪২ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে। ২৬ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি স্কুলশিক্ষার্থী নতুন বছরের প্রথম দিনই নতুন বই হাতে পেয়েছে।

পুরো বিভাগের মধ্যে শুধু রংপুর জেলার বই উৎসবের প্রথম দিনেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০ লাখ বই, মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩০ কপি বই, দাখিলে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৮, ইবতেদায়িতে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪০০, এসএসসি ভোকেশনালে ৮২ হাজার ৫০১, দাখিল ভোকেশনালে ১ হাজার ৪৪০ এবং কারিগরি ট্রেডে ৩১ হাজার ৫৬৫ কপি বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেয়া হয়েছে।