অনলাইন ডেস্ক : মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে পালন করার রীতি চালু আছে বিশ্বের অনেক দেশেই। দেশ ভেদে মা দিবস পালনের রীতি ভিন্ন ভিন্ন। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় মা দিবস পালন করার রীতি এ যুগের নয়। খ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকে মিসর, রোম ও গ্রিসে মা দিবস পালন করা হতো। তবে সে দিবসটা বর্তমানের মা দিবসের মতো ছিল না। সেটাকে দেবতাদের মায়ের আরাধনা বলা যেতে পারে। সে সময় দেবতাদের মায়েদের পূজা করা হতো।
এদিকে ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হতো বলে জানা যায়। এটাই ছিল নিজের আসল মাকে নিয়ে মা দিবস উদযাপন। এ দিনটিকে তারা মাদারিং ডে হিসেবে পালন করত। সেদিন সরকারি ছুটি ছিল এবং দিনটি তারা মায়ের সাথে কাটাত। তবে সেই সময় মা দিবস ততটা প্রসার লাভ করেনি।
এর প্রায় ১০০ বছর পর ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্মকবোধক গান লিখেছিলেন। সে গানটা তখন বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছিল কারণে বা অকারণে। মা জুলিয়াকে বেশ ব্যথিত করেছিল। তিনি এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য আমেরিকার সব মাকে একত্র করতে চেয়েছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল এই দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার। তিনি ব্যাপকভাবে সাড়া না পেলেও তার শহর বোস্টনে দিবসটি পালিত হচ্ছিল বেশ আয়োজন করে।
এদিকে ভার্জিনিয়ার একটি মহিলাদের দল জুলিয়া ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত মা দিবস পালন করত বেশ মর্যাদার সাথে। এই দলের নেত্রী ছিলেন অ্যানারিভেস জারভিস। তিনি গৃহযুদ্ধের সময়কালে মাদারস ফ্রেন্ডশিপ ডে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই দিবস পালন গৃহযুদ্ধ সময়কালে অনেকটাই শান্তির বার্তা এনে দিয়েছিল। অ্যানারিভেস জারভিস তার জীবনের সুদীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি গির্জায়। সেখানে তিনি সানডে স্কুলের শিক্ষকতা করতেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানাজারভিস মা দিবস পালনের হাল ধরেন। অ্যানাজীবিত ও মৃত সব মায়ের প্রতি সম্মান জানাতে তথা শান্তির জন্য এই দিবসটি পালন করতে চাচ্ছিলেন। এই লক্ষ্যে তারা ১৯০৮ সালে গ্রাফটনের গির্জার সুপারিনটেনডেন্টের কাছে একটি আবেদন জানান। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সে বছরই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও পেলসিলভেনিয়ার কয়েকটি গির্জায় মা দিবস পালিত হয়। এভাবেই অনেকে প্রতি বছর মা দিবস পালন করতে শুরু করে।
তারপর অনেক পথ পেরিয়ে ১৯১৪ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে জাতীয় মা দিবসের মর্যাদা দেয়। তারও অনেক পরে ১৯৬২ সালে মা দিবস আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
মা দিবস দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে পালিত হয়। আর্জেনটিনায় অক্টোবরের তৃতীয় রোববার মা দিবস পালন করা হয়। এ সময়টায় সেখানে বসন্তকালের আমেজ থাকে। তাই মা দিবসে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে বের হন। মায়ের সম্মানে তারা খাওয়া-দাওয়া করেন। আবার স্কুলে গিয়ে মায়ের উদ্দেশে চিঠি লিখে, নিজ হাতে মায়ের জন্য কার্ড লিখে মাকে উপহার দেন। এদিন তারা মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। এই দিবসে পরিবারের বাবা রান্না ও ঘরের কাজ করেন। আবার ফ্রান্সে মে মাসের শেষ রোববার মা দিবস পালন করে আসছে ১৯২০ সাল থেকে। এ দিনটি তারা সরকারিভাবে পালন করে। যে মায়ের যত বেশি সন্তান তার তত বেশি সম্মান। ঘরে আটটি বা তার চেয়ে বেশি সন্তান তাকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মান জানানো হয়। যার ছয়-সাটি সন্তান থাকে তাকে রৌপ্য পদক আর চার-পাঁচটি সন্তান থাকলে ব্রোঞ্জ পদক দিয়ে তাকে সম্মান জানানো হয়।
১৯১৩ সাল থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার জাপানে মা দিবস পালন করা হয়। জাপানিরা মাকে এ দিনে ফুল, রুমাল ও হাতব্যাগ উপহার দেয়। আর জাপানে আয়োজন করা হয় ঐতিহ্য জাপানি খাবারের।
মেক্সিকোতে অনেক আগে থেকেই মা দিবস পালন করা হয়। মেক্সিকানরা মে মাসের ১০ তারিখ মা দিবস পালন করে। সকালে পরিবারের সবাই মিলে মাকে গান শুনিয়ে মা দিবস শুরু করে। যে কোনো দেশে মা দিবস পালনের রীতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর কমতি নেই সন্তানদের মধ্যে।