দর্পন ডেস্ক : আজ আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেবে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর। ২০১৮ সালের শেষ সূর্যটি গোধূলির পর হারিয়ে যাবে মহাকালের গর্ভে। আর রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০১৯।
২০১৮ সালের সর্বশেষ দিন আজ। যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনায় বছরটি নানাভাবে মূল্যায়িত হবে। তবে আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১৮ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের খেলা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয় বিধায় খ্রিস্টীয় বছর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন অনেকেই। ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।
বিদায়ী বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ইতিমধ্যেই জাতীয় জীবনে ঘটে গেছে। ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে।
২০১৮ সালে বাঙালির জাতীয় জীবনে আরেকটি বড় ঘটনা ঘটেছে ১২ মে বাংলাদেশ মান সময় ভোর ২টা ১৪ তে। (১১ মে ২০১৮ ইউটিসি) এ সময় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে এ বছর। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
২০১৮ সাল পৃথিবীর ইতিহাসেও আরেকটি উল্লেখযোগ্য বছর। জুন মাসে পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করে বিশেষ এক সাক্ষাৎকার। দুই পারমাণবিক শক্তিধর শক্রভাবাপন্ন দেশ আলোচনায় বসে। প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সাংবাদিক জামাল খাশোগি অক্টোবর মাসে সৌদির ঘাতক টিমের হাতে নিহত হন। শুরুর দিকে সৌদি সরকার হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেছে যে, খাশোগিকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করা হয়েছে। তবে তারা এখনও পরিষ্কার করেনি, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কার নির্দেশ ছিল।
জুন মাসেই বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ আয়োজন করে রাশিয়া। এ খেলায় শিরোপা জয় করে ফ্রান্স।
প্রিন্স হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের বিয়ে হয় এ বছর। মে মাসে তারা জুটি বাঁধেন। উইন্ডসরে রানী ও ছয়শ’ অতিথির সামনে তারা প্রতিশ্রুতি বিনিময় করেন। পৃথিবীজুড়ে লাখ লাখ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল তাদের বিয়ে।
এ বছর পৃথিবীজুড়ে অনেকবার চরম আবহাওয়া বয়ে এনেছে। ইউরোপের খরা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বনে আগুন আর এশিয়ায় চরম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশ্ব এজেন্ডার শীর্ষে ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা দিনে দিনে আরও বেড়ে চলেছে।
বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী যে গণহত্যাসহ অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছিল তা নিয়ে চুপ থাকা এবং সংকট নিরসনে ভূমিকা না রাখায় অং সান সু চিকে তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেকবার। এছাড়া বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একের পর এক তাকে দেয়া পদক ও সম্মাননা ফিরিয়ে নিয়েছে। ৯২ বছর বয়সে নির্বাচন করে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ।