মোঃ শাহাগির মৃধা, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থীতা নিয়ে জামাই-শ^শুরের টানাটানির অবসান হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে শ্বশুর এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জামাই এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। ফলে লাঙ্গল নয় স্বতন্ত্র সিংহই যে মহাজোটের সমর্থিত প্রতীক এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে।

সরাইল-আশুগঞ্জে যে অপশক্তি কাজ করছে সে অপশক্তি রোধ করতেই নিজে সরে দাঁড়িয়ে শ্বশুরকে সমর্থন জানিয়েছেন বলে জানান লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। একথায তিনি আসনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ইঙ্গিত করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরাইল-আশুগঞ্জে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং আগ্রহ ছিল ভোটারদের মাঝে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আমাকে এ আসন থেকে মহাজোটের পক্ষ থেকে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি এ আসনের মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।

তিনি বলেন, সবার একটাই আশা এখানে একটা অপশক্তি কাজ করছে। সেই অপশক্তিকে ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে লোকজন আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন। পারিবারিক ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মনোনয়ন নিয়ে ওনার (জিয়াউল হক মৃধা) সঙ্গে আমার একটা কাল্পনিক বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে এটি ঘটতেই পারে।

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এই এলাকার মানুষ যেটা চায় সেটা যেন বহাল থাকে, ওনাদের আকাঙ্খার প্রতি আমি সম্মান দেখাচ্ছি। অপশক্তিকে ঠেকানোর জন্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমি জিয়াউল হক মৃধার সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।

এই আসনের সিংহ প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি পানি কাটলে দুই ভাগ হয় না তেমনি রক্ত কাটলেও দুই ভাগ হয় না। এ চিন্তা করেই আমরা আজ মিলিত হয়েছি। পারিবারিকভাবে আমরা মিলিত হতে পেরেছি।

তিনি বলেন, সরাইল-আশুগঞ্জ নির্বাচনী এলাকাকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র ও নানা ধরণের ভানুমতির খেলা চলছে। সেই ভানুমতির খেলার অবসান ঘটানোর প্রয়োজন। এজন্য দরকার মহাজোটের শক্তিশালী উদ্যোগ।

জিয়াউল হক মৃধা বলেন, সরাইল-আশুগঞ্জকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। রেজাউল এটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। এজন্য আমি তাকে সরাইল-আশুগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান রতন, সরাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন মন্তু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনটি মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। পরে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তারই শ^শুর বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রতীক বরাদ্দের সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিবের আরেকটি সংশোধনী চিটির ভিত্তিতে দুজনই দলীয় লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ চান। এ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্ধে তাদের প্রতীক বরাদ্দ কিছুু সময় স্থগিত রাখা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযাায়ী রেজাউলকে লাঙ্গল ও জিয়াউলকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীক দেয়া হয়।