বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয়নি। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে। নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে।
শনিবার দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে জনস্বার্থে আপনারা কাজ করুন। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ৩০ তারিখে আপনারা কেউ ভোট কেন্দ্র ছেড়ে যাবেন না। সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। ভোট দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
বিএনপির পথসভা সম্পর্কে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধির পাঠানো খবর
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পথসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, যখন বৃহত্তর দিনাজপুর ছিল তখন আমি এ জেলার বাসিন্দা ছিলাম। আর দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনেকদিন পড়িয়েছি। দিনাজপুর-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী আখতার আমার ছাত্র। আমি বুড়ো হয়ে গেছি। তবে আমার শেকড়, আমার রক্তের টান এ বৃহত্তর দিনাজপুর জেলায়।
স্থানীয় ভাষায় তিনি বলেন, ‘অত্তিকার মানুষ হামাক বাহে কহে। বাহের লোকেই সব সময় বড় বড় বিপ্লব করেছে। ব্রিটিশ আমলে অত্যাচার ও নির্যাতন করত তখন এ অঞ্চলের মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেই কৃষকদের পক্ষে, নেতার নাম নুরুলদিন। তিনি বলেছিলেন, কুনঠে বাহে জাগো সবাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সবাইকে জাগতে হবে। আজকে ব্রিটিশ নেই পাকিস্তান নেই, কিন্তু তাদের চেয়েও বড় স্বৈরাচার আমাদের বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে। তারা আমাদের মারছে, মামলা দিচ্ছে, ফাঁসি দিচ্ছে, আমাদের ছেলেদের গুম করছে, মা-বোনদের বেইজ্জত করছে। আমাদের স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে।
দিনাজপুরেই খালেদা জিয়ার জন্ম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এখন পরিত্যক্ত কারাগারে, অসুস্থ। তিনি গিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে এবং দেখা করার সময় এসেছিলেন হুইল চেয়ারে। খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের মানুষ ও দিনাজপুরের মানুষ জানে গণতন্ত্র ও অধিকারের কথা বলায় তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে। যারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সাহস পায় না। তাদের পক্ষে পুলিশকে থাকতে হয়, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে পক্ষে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে মামলা মোকদ্দমা উপেক্ষা করে নির্বাচন করছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে যে মামলা তার জন্য ৩০ তারিখে ধানের শীষে ভোট দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র ৭ দিন বাকি। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে এখানে এসেছি। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অনেকেরই প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। বেআইনি কাজ করছে। আইনে আছে পৌর মেয়র নির্বাচন করে বিজয়ী হলে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু তারা জোর করে নির্বাচনের ৫ দিন আগে এখন বলছে এমন আইন নেই। দিনাজপুর-৩ আসনের প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীরসহ বেশ কিছু বিএনপির প্রার্থীকে তারা নির্বাচনের সুযোগ দিচ্ছে না। সৎ পথে দাঁড়াবার সাহস তাদের নেই। পুলিশ প্রশাসন দিয়ে তারা আমাদের ঠেকাতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না. ড. জাফরুল্লাহ এবং ২০ দলসহ সবাই মিলে এক হয়েছি। সব মানুষ একদিকে আর এ সরকার কিছু লোকজন নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছে।
তিনি বলেন, যত খুশি তুলে নিয়ে যাও, গায়েবি মামলা করে কোনো লাভ হবে না। ৩০ তারিখে ধানের শীষে ভোট দিয়ে মানুষ তাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। কোনো কিছু এমনি আসে না, ’৭১ সালে এমনি বিজয় আসেনি, ৯ মাস যুদ্ধ করতে হয়েছে। তাই বিজয়ী করতে হলে বুকে সাহস নিয়ে ৩০ তারিখের নির্বাচনে ভোট দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ বছরে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু সব উন্নয়ন হয়েছে নেতাদের। বাড়ি হয়েছে, গাড়ি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। কৃষক ধানের দাম পাননি, শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। বিনা পয়সায় সার, ১০ টাকা কেজিতে চাল, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা দিয়েছিল। কিন্তু এখন চাকরি হয় না। চাকরি হতে হলে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এরপরেও চাকরি হয় না, ডিএনএ টেস্টে আওয়ামী লীগ হতে হবে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে নিজেদের মতো করে সরকার গঠন করতে ধানের শীষ মার্কায় ভোট কামনা করেন তিনি।
চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মজিবর রহমান শাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী আখতারুজ্জামান মিয়া, সাবেক এমপি রেজিনা ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এমএ জলিল, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী নাজমা মসির প্রমুখ।
এর আগে জেলার পার্বতীপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পথসভায় বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, দেশকে স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। ১০ মাস ধরে তিনি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করতে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যার সমালোচনা করে তিনি বলেন কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
ধানের শীষে ভোট দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চায়, অধিকার চায়, চাকরি চায়, নিরাপত্তা চায়, কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য চায় এবং শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তাই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে সবাই যাবেন, ভোট দেবেন এবং গণনা শেষে বিজয়ের মালা নিয়ে তারপর ঘরে ফিরবেন।
পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জালাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর-৫ পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী আসনের বিএনপি প্রার্থী এজেডএম রেজওয়ানুল হক, পৌর বিএনপি সভাপতি আতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা সরকারি ছত্রছায়ায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দূর করার জন্য ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি নির্বাচন করছে।
বিকালে ঠাকুরগাঁও উনত্রিশ মাইল এলাকায় এক পথসভায় তিনি এসব বলেন। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।