দর্পণ ডেস্ক : গতকাল আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিজয়ী হলে তাদের সরকারের প্রধান কে হবেন সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নাকি সরকার গঠন করবে। তো সেই সরকারের প্রধান কে হবেন, সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতির সামনে দেখাতে পারেনি। প্রশ্ন রেখে যাই, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, নাকি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, নাকি যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত? কে হবেন সরকারপ্রধান, সেটা তো স্পষ্ট করে জাতির সামনে জানায়নি।

তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের জনগণকে। জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর এ দায়িত্ব ছেড়ে দিলাম। কারণ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই আলোচনা সভা আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনারা কী পরিবর্তন করে ফেলবে? আজকে যারা এক হয়েছে তারা কারা? একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী; সে যুদ্ধাপরাধীরা কিভাবে নমিনেশন পায়, যারা বাংলাদেশই চায়নি! আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। মনে হয়, যেন নামটাই নেয়া উচিত না। আমার তাদের জন্য করুণা হয়, কারণ তারা দিকভ্রষ্ট। তাদের আর কোনো নীতি নাই। নীতিভ্রষ্ট, আদর্শহীনরা কখনো মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই এবং দিতেও পারবে না। আমি বলব, এরা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাস করে না।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম, তারা ঘোষণা করেছে, স্বেচ্ছাচারিতাকে নাকি পরিবর্তন করবে।’ তিনি বলেন, ‘এ পরিবর্তন কি জঙ্গিবাদ সৃষ্টি? বাংলা ভাই সৃষ্টি? মানিলন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস? আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা? আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন? দেশের সব উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া? এই পরিবর্তন তারা আনতে চান? ছিল তো ক্ষমতায়। ৪৭ বছর তো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৭ বছরের মধ্যে ২৯ বছর তো এরা ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছিল মানুষকে? কী পেয়েছে মানুষ?’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার সময় তার পরিবারের তেমন কোনো সম্পদ না থাকার দাবির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের কথা শুনেছি, ভাঙা স্যুটকেস ছাড়া কিছুই নাই, তারা কত সম্পদের মালিক! সম্পদ শুধু দেশে নয়, দেশে আবার বিদেশে তাদের সম্পদের মালিকানার বিরাট হিসাব চলে আসছে। ঘুষ-দুর্নীতি করে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেন, যুক্তি দেখান, বুদ্ধি দেন, বড় বড় কথা বলেন, আদর্শের বুলি আওড়ান আজকে তাদের সব ধরনের উচ্চবাচ্য কোথায় হারিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছে খুনিদের সঙ্গে, দুর্নীতিবাজ অস্ত্র চোরাকারবারিদের সঙ্গে। কিসের স্বার্থে, কেন— এটাই প্রশ্ন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দুর্নীতি পায়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। বাংলাদেশের কোনো মানুষের মাথা হেট হোক, সেটা করি নাই কখনো। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে গেলে সম্মান, মর্যাদা পাচ্ছে, সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কোথায়?’

আরো পাঁচটি বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন : বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নেমে এসেছে। আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকলে দারিদ্র্য ৫/৬ ভাগে কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। সেজন্যই দেশের সেবা করার জন্য আমাদের সরকারে থাকা একান্ত প্রয়োজন। আরো পাঁচটি বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন আওয়ামী লীগের। কারণ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করতে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়া প্রয়োজন।’

নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। ২০২০-২০২১ এই এক বছর মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। বছরব্যাপী মুজিববর্ষ পালন করা হবে। এরপর আমরা উদযাপন করব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তী যখন পালন করব তখন বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত। তখন বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না, ক্ষুধার্ত থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’ নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আমি বাঙালির কাছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, এই কারণে যাতে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।’

বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে : আত্মবিশ্বাসের সুরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যচ্ছে। আর কেউ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারবে না। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। বাংলাদেশের জনগণ কখনো ভুল করে না। তাদের সাংবিধানিক অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সে সাহসও পাবে না। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে সেটা আমি বিশ্বাস করি।’