দর্পণ ডেস্ক : রোববার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে প্রচারণার ক্ষেত্রে এই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে যে, ঢাকা-৪ আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপকভাবে এগিয়ে আছেন মহাজোটভুক্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। একই সঙ্গে প্রচারণায় দারুণভাবে পিছিয়ে আছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সরেজমিন ঢাকার শ্যামপুর-কদমতলী আসনে প্রচারণায় বাবলার পক্ষের লোকজন, এবং ব্যানার-পোস্টার দেখা গেছে বেশি। নির্বাচনী অফিসও দেখা গেছে বাজারে বাজারে, মোড়ে মোড়ে। গোটা এলাকার অলি-গলি ছেয়ে গেছে বাবলার লাঙল মার্কা পোস্টারে। একই এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরেও সালাহউদ্দিনের ধানের শীষ মার্কার কোনো ব্যানার-পোস্টার, নির্বাচনী অফিস দেখা যায়নি। প্রকাশ্যে রাস্তায় নেমে এই প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন, এমন লোকজন মাঠে নামলেও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত ও বিএনপির লোকজন গোপনে গোপনে যোগাযোগ করছেন, ভোট চাইছেন।
বাবলা নিজে দিন-রাত পরিশ্রম করে নির্বাচনী গণসংযোগ, পথসভা, সমাবেশ করছেন। অন্যদিকে হঠাৎ হঠাৎ স্বল্প সময়ের এই গলি, ওই গলিতে প্রচারণায় নামার খবর পাওয়া গেছে সালাহউদ্দিনের। হয়রানি, গ্রেফতার এড়াতে তিনি প্রকাশ্যে পথসভা, জনসভা করছেন না। ভোটাররাও রয়েছেন নীরবে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা-৪ আসনের প্রভাবশালী দুই প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর একতরফা প্রচারণা চলছে বলেই উল্লেখ করা যায়। এ আসনে ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৮ জন।
গতকাল শ্যামপুর ওয়াসা রোডের একটি রিকশা গ্যারেজের মালিক মুরাদ মহাজন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এলাকায় লাঙলের জোয়ার বেশি। ধানের শীষের কোনো লোক নাই, পোস্টার নাই। তবে সবাই চায় সুষ্ঠু ভোট।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, ‘সব মানুষ প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছেন না। কথা বললেই থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। সালাহউদ্দিন প্রকাশ্যে ভোট চাইতে না পারলেও তার নীরব ভোটার রয়েছে। তিনি প্রার্থী হিসেবে অনেক শক্তিশালী। একই সঙ্গে বাবলার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলেও তার অতীতের কার্যক্রম ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে অনেকের কাছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সমর্থক বলেন, ‘রাস্তায় নামতেই দিচ্ছে না আমাদের। ভোট চাওয়ার জন্য রাস্তায় নামলেই হয়রানি, গ্রেফতারের শিকার হতে হচ্ছে। এই কারণে ধানের শীষের ভোটাররা নীরবে আছে। নীরবে ভোট দেবে তারা।’
কদমতলীর কমিশনার রোডের ভোটার শাহীনুর বেগম বলেন, ‘প্রার্থী হিসেবে আমরা অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমকে চেয়েছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সানজিদা যার প্রতি সমর্থন দিয়েছেন, তাকেই ভোট দেব আমরা।’
অ্যাডভোকেট সানজিদা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী বাবলার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাইন উদ্দিন বাবু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ধারা বজায় রাখতে ঢাকা-৪ আসনের ভোটাররা লাঙল মার্কায় ভোট দেবে। বিগত দিনে বাবলা ডিএনডি বাঁধ উন্নয়ন, পানির পাম্প স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন।’
কদমতলীর যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বাবলার সঙ্গেই আছি আমরা। তবে বাবলা ও সালাহউদ্দিনের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।’
সরেজমিন ঢাকা-৪ আসনের হাতেগোনা কয়েকটি গলিতে জাকের পার্টির প্রার্থী মো. আজাদ মাহমুদের গোলাপ ফুল মার্কার কিছু পোস্টার দেখা গেছে। এছাড়া চরমোনাই পীর সমর্থক প্রার্থী মোসাদ্দেক হক বিল্লাল আল মাদানির হাতপাখা মার্কার পোস্টারও দেখা গেছে।
উত্তর জুরাইনের পাইপ রাস্তায় গিয়ে জানা গেল, গত ১২ ডিসেম্বর বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন এই এলাকায় ২০-৩০ জন লোক নিয়ে গণসংযোগ করেছেন। হ্যান্ডমাইকে এলাকার মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন তিনি।
গতকাল দুপুরে নির্বাচনী এলাকার এক পথসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘এরশাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মার্কাও লাঙল। ঢাকা-৪ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে এলাকার মানুষের কাছে ভোট চাই আমি। গত পাঁচ বছরে এলাকায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এর মধ্যে এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে, যা উল্লেখযোগ্য।’