দর্পণ ডেস্ক : ১৯৮০ সাথে প্রথম এই ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করেছে বলে জানা যায়। সে সময় থেকে এটি নিয়ে বিচিত্র সব ধারণা তৈরি হতে থাকে যার অনেকগুলোই একেবারে ভুল।
১. আক্রান্তদের সাথে সাধারণ মেলামেশা–
২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করতো যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ত্বক ও মুখের লালা দ্বারা আপনিও আক্রান্ত হবেন। এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, চুমু খেলে, একই পাত্রে খাবার খেলে, পানি খেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহার করলে, তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে আপনিও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না।
২. এর নিরাময় সম্পর্কে প্রচলিত কিছু মিথ–
আফ্রিকার কিছু দেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডে অনেকের বিশ্বাস তৈরি হয়েছিলো যে আক্রান্ত হওয়ার পর কুমারী মেয়ে বা যৌন সম্পর্কের কোন অভিজ্ঞতা নেই এমন কারোর সাথে যৌন মিলনে এই ভাইরাস দুর হয়ে যায়।কিন্তু এটি একেবারেই ভুল ধারনা। এতে বরং কুমারীরা আক্রান্ত হয়।এই অঞ্চলে এই বিশ্বাসের কারণে কুমারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।১৬শ শতকে ইউরোপে সিফিলিস ও গনোরিয়া আক্রান্ত হলে একই ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল।
৩. মশা দ্বারা কি ছড়ায়-
আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে যদি অন্য কামড়ায় তাহলেও এটি ছড়াতে পারে সেটি ভুল ধারনা।যৌন মিলনের পর স্নান করলে এইচআইভি ভাইরাস পরিষ্কার হয় এই ধারনাও একেবারেই ভুল।যদিও রক্তদ্বারা এই ভাইরাস ছড়ায় কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে মশা বা রক্ত খায় এমন কিট দ্বারা আপনি আক্রান্ত হবেন না।তার দুটি কারণ। একটি হল একজনের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে সে সেই রক্ত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির শরীরে ইনজেকশন দেয়ার মতো করে রক্ত ঢুকিয়ে দেয়না।আর মশা বা অন্য কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময় বেচে থাকে।
৪. ওরাল সেক্সে এটি হতে পারে-
আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ওরাল সেক্স অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এইচআইভি পজিটিভ নারী বা পুরুষের সাথে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। কিন্তু এর হার খুব বিরল।
৫. কনডমেও রয়েছে ঝুঁকি–
কনডম ব্যবহার করলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার কোনই সম্ভাবনা এমন ধারনাও ঠিক নয়। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের সময়ে কনডম ফুটো হয়ে গেলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।তাই ইদানীং এর প্রতিরোধ বিষয়ক প্রচারণায় শুধু কনডম ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে তা নয়, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।এর আরেকটি কারণ হল আক্রান্ত প্রতি চারজন ব্যক্তির অন্তত একজন জানেননা যে তার এই শরীরে এটি রয়েছে। যাদের সংখ্যা এক কোটি।সে হয়ত নিজের অজান্তে অন্যকে আক্রান্ত করছে।
৬. কোন লক্ষণ না থাকলে কি ঘটে-
কোন লক্ষণ দেখা না দিলে এইচআইভি আক্রান্ত নন এটিও ভুল ধারনা। এই জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘ দিন কোন রকমের লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।এভাবে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি দশ থেকে পনেরো বছরও বেঁচে থাকতে পারেন।এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েকটি সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দিতে পারে, হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে র্যাশ দেখা দিতে পারে।অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেবে যখন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করাই এইচআইভির মুল বিপদ।
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকলে কাশি, ডাইরিয়া, লিম্ফ নোড বা চামড়ার নিচে ফুলে যাওয়া গোটার মতো দেখা দেবে, ওজন কমে যাবে।চিকিৎসার অভাবে আরও ভয়াবহ অসুখও হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সামান্য অসুখেও মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয় যদি তার চিকিৎসা না নেয়া হয় কারণ শরীর তার স্বাভাবিক নিয়ে আর অসুখের সাথে লড়াই করতে পারে না।
৭. মায়েরা সবসময় শিশুদের আক্রান্ত করে না–
আক্রান্ত নারী সন্তান জন্ম দিলে তার শিশুরও শরীরে এই জীবাণু চলে যাবে। কিন্তু সবসময় সেটি নাও হতে পারে।আক্রান্ত মায়ের শরীরের জীবাণুর মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে সন্তান জন্মদানের সময় সে শিশুকে আক্রান্ত নাও করতে পারে।
৮. আক্রান্তরা অল্প বয়সে মারা যায় মিথ–
এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিও দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছেন।জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা বলছে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের ক্ষেত্রে এইচআইভি জীবাণুর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে।এমনকি অনেক সময় রক্ত পরীক্ষায়ও জীবাণুটি ধরা পরে না। তবে তারা যদি চিকিৎসায় অবহেলা করেন তবে এর মাত্রা আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।