মোঃশাহাগির মৃধা, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এইবারও তৃত্বীয়বারের মতো তাদের শরিকদল জাতীয়পার্টিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটি বরাদ্দ দিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ আসনটিতে এবার নতুন মুখ দিয়েছে জাতীয়পার্টি।
আলোচনা আছে, মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে বিগত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে টানা দুইবারের নির্বাচিত এমপি, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গত একসপ্তাহের ব্যবধানে সাংসদ জিয়াউল হকের জামাতা জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া নানা কূটকৌশল খাটিয়ে এই আসনটি তিনি লুফে নেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার মনোনয়ন চৃড়ান্ত এমন খবরে শনিবার (২৪ নভেম্বর) সাংসদ জিয়াউল হক ছুটে যান ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। একপর্যায়ে শ্বশুর জিয়াউল হকের জন্য আসনটি ফিরিয়ে আনতে জামাই রেজাউল ইসলামের বাসায় শনিবার গভীররাত পর্যন্ত বৈঠক করেন সরাইল উপজেলা জাতীয়পার্টির কয়েকজন নেতা।
তাছাড়া এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানাভাবে জামাতা রেজাউল ইসলামকে অনুরোধও করছেন। এতোকিছুর পরও জামাই বাবু এ আসনটির ব্যাপারে শ্বশুরকে ছাড় দিতে নারাজ। জামাই রেজাউল ইসলামের দাবি, শ্বশুর জিয়াউল হককে তিনিই এ আসন থেকে দুই দফা এমপি বানিয়েছেন। এইবার তিনি (রেজাউল) নিজেই এ আসনে নির্বাচন করবেন। শেষ বয়সে পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তাকে (রেজাউল) এই আসনটি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাংসদ জিয়াউল হকের ঘনিষ্ঠ একাধিক ত্যাগী নেতা।
এদিকে এই আসনটি নিয়ে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে জামাই (রেজাউল) এবং শ্বশুর (জিয়াউল) এর মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত “লাঙ্গল” প্রতীকে এখানে রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া নির্বাচন করবেন বলে মহাজোটের স্থানীয় অনেক নেতার দাবি। অপরদিকে এই আসনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা জা’পার কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে ইতিবাচক চোখে দেখছে এখানকার বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তাদের দাবি, এখানে মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম হলে এই আসনটিতে বিএনপির বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত। কারণ হিসেবে বিএনপি নেতারা জানান, এই নির্বাচনী আসনে জিয়াউল হক মৃধা আর রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া এক কথা নয়। রেজাউল ইসলাম এই এলাকার জামাই হলেও তার বাড়ি অন্য উপজেলায়। এখানকার মানুষেরা রেজাউল ইসলামকে ভালোভাবে চিনেন না। তাছাড়া সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার মানুষ আগে থেকেই এখানে “বহিরাগত প্রার্থী” মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে।
সরাইল উপজেলা জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব (প্রস্তুতি কমিটি) মোঃ এমদাদুল হক ছালেক ‘দৈনিক যুবকন্ঠের” এ প্রতিবেদককে জানান, এই আসনে পর পর দুইবারের নির্বাচিত সফল এমপি গণমানুষের নেতা জিয়াউল হক মৃধা। এইবারও এখানকার মানুষ জিয়াউল হককে এমপি হিসেবে দেখতে চান। রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া এখানে নির্বাচন করে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। জামাই (রেজাউল) বেচারা বিষয়টি বুঝতে চাচ্ছেন না। তারপরও আমরা চেস্টা করছি। আশা করি জামাই’র (রেজাউল) শুভ বুদ্ধি উদয় হবে।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন মাস্টার জানান, এখানকার বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। মহাজোটের অতিথি প্রার্থী, এখানে নির্বাচনে বিএনপির সাথে পাত্তাই পাবে না। এমন হলে এই আসনে বিএনপির বিজয় আরো সহজ হবে।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ) জানান, এখানকার মানুষ নৌকা প্রতীক চান। তারপরও দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না। দল যাকে মনোনয়ন দেই, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।