প্রার্থী হতে হলে আগে পদত্যাগ করতে হবে তাদের। তবে, স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে না থাকলে পদত্যাগের প্রয়োজন পড়বে না। এটি কার্যকর হবে স্থানীয় সরকারের পাঁচ ধরনের প্রতিষ্ঠানেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে
স্বপদে থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদগুলো হলো—সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।

জানা গেছে, সম্প্রতি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (২৩ নভেম্বর) কমিশন সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে কমিশন তার আইন শাখা থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা নেয়। রবিবার (২৪ নভেম্বর) এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। পরে শিগগিরই তা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সকল রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানিয়ে দেওয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়াও বিএনপি থেকেও ইসিকে চিঠি দিয়েছিল এটি জানতে যাওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে স্বপদে বহাল থেকে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতের কোনও নির্দেশনা আছে কিনা, সেটা স্পষ্ট হওয়ার পর রবিবারই সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’

সূত্র জানায়, শনিবার কমিশন সভায় স্থানীয় স্তরের প্রধান পদধারী জনপ্রতিনিধিরা স্বপদে থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনের মতে অফিস প্রফিট হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদটি লাভজনক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের মধ্যে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, এ স্তরের মেয়ররা স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারেন না। আবার পৌরসভার মেয়েররা পদে থেকে ভোট করতে পারবেন এমন একটি আদেশও রয়েছে। তবে, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। সম্প্রতি রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইসির সঙ্গে ব্রিফিং অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এক্ষেত্রে তাদের করণীয় জানতে চান। তবে কমিশন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে না পেরে পরে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরে ইসির আইন শাখার কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার কমিশনের ৪০তম সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের বিষয়ে কমিশন প্রাথমিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় এ পদটি লাভজনক। বিধায় সিটি মেয়রদের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে ইসি।

তবে, এ বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নিলেও তারা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং অফিসারদের মৌখিকভাবে তা জানাবে। কারণ লিখিত কোনও নির্দেশনা দিলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এতে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।

কমিশন সভার কার্যপত্রে বলা আছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে ধারা ১২(১)(সি) আরপিওতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে বাছাইয়ে ও আপিলে সিটি, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের অযোগ্য করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক রিট মামলা দায়ের হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন আদেশ হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকজন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান পদে থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আগের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিল।

ওই কার্যপত্রে, উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়রদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস-প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা-কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার কতদিন আগে পদত্যাগ করতে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়।