দর্পণ ডেস্ক : শুরুতেই হোঁচট! গায়ানায় ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তবে মাঝের সময়টা ‘সৌরভ’ ছড়িয়েছে সৌরভের ব্যাট। কিন্তু ব্যক্তিগত ১২০ রানে হাল ছাড়েন তিনি। দলের সংগ্রহ তখন ২২২ রান। এরপর বিপর্যয়টা যেন আরো ভয়াবহ। দলের স্কোর বোর্ডে ১৮ রান যোগ হতেই আরো তিন উইকেটের পতন। কিন্তু ৯ম উইকেটে দুই স্পিন বোলার ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানের জুটিতে। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন যখন শেষ হয় তখন স্কোর বোর্ডে ৩১৫ তাও ৮ উইকট হারিয়ে।
আজ দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন গতকাল শেষ বেলায় স্বস্তির নায়ক তাইজুল ইসলাম ৩২ ও অভিষিক্ত নাঈম ইসলাম ২৪ নিয়ে। লেজের এমন ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটসম্যান মুমিনুলও পেয়েছেন স্বস্তি। তার মতে এ রানই হতে পারে টাইগারদের জয়ের ভিত।
চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্টের চার ইনিংসের কোনোটিতেই দেড়শ’ পার করতে পারেনি বাংলাদেশ। সব শেষ ৩১৪ রানের ইনিংসটি ছিল ২০১৪-তে কিংস্টোনে। আর দেশের মাটিতে সব শেষ ৩০০ ছাড়ানো দলীয় ইনিংস ছিল ২০১২-তে। বলতে গেলে ব্যাট হাতে দলটির বিপক্ষে দারুণভাবে ভুগছিল টাইগাররা। গতকাল যখন ২২২ রান মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে তখন স্কোর বোর্ডে ছিল ৪শ’ ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ২৩৫ রানে মধ্যে দলের আরো ৪ উইকেট পতনে ভিত নড়ে যায় দলের। কিন্তু সেখান থেকে দলকে স্বস্তি এনে দেন তাইজুল ও নাঈম ইসলাম। দুই বোলারের জুটিতে শেষ পর্যন্ত ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৪ বছর পর ৩শ’ স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
০ রানে সৌম্য সরকারের বিদায়ের পর টসে জিতে যেন সাকিব আল হাসানের সামনে একের পর এক বিপদই আসতে থাকে। কেমার রোচের বলে ব্যক্তিগত ৩ রানে ইমরুল কায়েস ক্যাচ দেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন রোস্টন চেজ। তবে অন্যদিকে মুমিনুল ছিলেন সাবলীল। গত টেস্টেই খেলেছেন ১৬১ রানের ইনিংস। ইমরুল জীবন পান আরো একবার। জোমেল ওয়ারিক্যানের প্রথম ওভারেই স্লগ শট খেলে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিড উইকেটে। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বাঁ-হাতি স্পিনার করেছিলেন নো বল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ওয়ারিক্যানের ধারহীন বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিলেন ব্যক্তিগত ৪৪ রানে। তাতেই ১০৫ রানের জুটি ভাঙে মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগে।
এরপর তৃতীয় উইকেটে মুমিনুলের সঙ্গে মিঠুনের জুটি জাগিয়েছিল বড় কিছুর সম্ভাবনা। দিনের সম্ভবত সবচেয়ে বাজে শটে সেই সম্ভাবনা শেষ করেন মিঠুন। লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে আউট ২০ রানে। বাংলাদেশ খেলার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নেয় পরের জুটিতে। ইনজুরি কাটিয়ে খেলতে নামা সাকিবের ব্যাটিংয়ে ছিল দারুণ ভরসা। এরপর ৬৭ রানে জীবন পেয়ে মুমিনুল আরও অপ্রতিরোধ্য। ৯২ থেকে বিশুকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৯৮। সেখান থেকে চেজকে বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি। এই মাঠে এটি তার টানা তৃতীয় আর আট টেস্টে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। বছরের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে ছুলেন এই বছরের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলিকে। অষ্টম সেঞ্চুরিতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডে স্পর্শ করলেন তামিম ইকবালকে। কিন্তু এই জুটি যখন বড় কিছু স্বপ্ন দেখাচ্ছিল তখনই ছোবল দিলেন গ্যাব্রিয়েল। প্রথম ছিলেন উইকেটশূন্য। সেই বোলার ৩ ওভারে কাঁপিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। ১২০ রান করা মুমিনুলকে ফিরিয়ে শুরু। দুই বল পরই ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ মুশফিকুর রহীম। ভেতরে ঢোকা বলেই গতিতে হার মেনে বোল্ড মাহমুদউল্লাহ। তার পরের ওভারে বল স্টাম্পে টেনে ৩৪ রানে আউট সাকিব।
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টেস্ট
তারিখ : ২২-২৬ সেপ্টেম্বর (প্রথম দিন)
টস: বাংলাদেশ (ব্যাটিং) প্রথম দিন
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস:
ব্যাটসম্যান রান বল ৪ ৬
ইমরুল ক এমব্রিস ব ওয়ারিকান ৪৪ ৮৭ ৫ ০
সৌম্য ক ডওরিচ ব রোচ ০ ২ ০ ০
মুমিনুল ক ডওরিচ ব গ্যাব্রিয়েল ১২০ ১৬৭ ১০ ১
মিঠুন ক ডওরিচ ব বিশু ২০ ৫০ ২ ০
সাকিব ব গ্যাব্রিয়েল ৩৪ ৬৮ ২ ০
মুশফিক এলবিডব্লিউ ৪ ৩ ১ ০
মাহমুদুল্লাহ ব গ্যাব্রিয়েল ৩ ৭ ০ ০
মেহেদী ব ওয়ারিকান ২২ ৩১ ৩ ০
নাঈম ব্যাটিং ২৪ ৬০ ২ ০
তাইজুল ব্যাটিং ৩২ ৫৭ ৩ ১
অতিরিক্ত: ১২ (বা ৩, লেবা ৫, নো ৪)
মোট: ৩১৫
(৮ উইকেট, ৮৮ ওভার)
ব্যাট করতে বাকি: মোস্তাফিজুর রহমান
উইকেট পতন : ১-১ (সৌম্য, ০.৩), ১০৫-২ (ইমরুল, ২৬.৫), ১৫৩-৩ (মিঠুন, ৪২.৩), ২২২-৩ (মুমিনুল, ৫৯.৩), ২৩০-৬ (মাহমুদুল্লাহ, ৬১.৫), ২৩৫-৭ (সাকিব, ৬৩.৫), ২৫৯-৮ (মেহেদী, ৭২.১)।
বোলিং : রোচ ১৫-২-৫৫-১, গ্যাব্রিয়েল ১৮-২-৬৯-৪, চেজ ১১-০-৪২-০, ওয়ারিকান ২১-৬-৬২-২, বিশু ১৫-০-৬০-১, ব্রাথওয়েট ৮-১-১৯-০।