বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গারা অত্যাচারিত। সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেসি (এনএলডি) মিয়ানমারে ক্ষমতায় আসে ২০১৫ সালে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি। বরং বেড়েছে।
একটি সমীক্ষা দাবি করেছে, গত তিন বছরে মিয়ানমার থেকে ৭২ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। আরও বহু মানুষকে খুন ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু সু চি কখনও তা নিয়ে প্রতিবাদ করেননি। তার দলের সরকারের অধিকাংশ নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। তা নিয়েও উচ্চবাচ্য নেই।
একদিন নিজে গৃহবন্দি থেকেও মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। লড়াই করেছেন স্বাধীনতার জন্য। প্রায় দেড় দশকের সংগ্রাম জিতে যখন ক্ষমতায় বসলেন, তখন সেই লড়াইয়ের মুখই গেল পাল্টে। মিয়ানমারবাসীর কাছে শান্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতার দূত হয়ে উঠেছিলেন যে আন সাং সু চি, তার সেই সব গুণই এখন প্রশ্নের মুখে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিধন-ধর্ষণ, দেশছাড়া করার বিরুদ্ধে মৌন তিনি। দেশের অভ্যন্তরে দুর্নীতি-অশান্তিতেও আর সরব নন। সেনার অত্যাচারে নেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। তাই এ বার তাদেরই দেওয়া সর্বোচ্চ মানবাধিকারের পুরস্কার ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনশেন্স’ কেড়ে নিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
লন্ডনের এই সংস্থাটির তরফ থেকে সোমবার এ ঘোষণা করা হয়েছে। ‘আজ আমরা অত্যন্ত হতাশ যে আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের প্রতীক আর নেই। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনশেন্স’ বা ‘মানবাধিকারের দূত’ পুরস্কারের সঙ্গে আপনি আর সুবিচার করতে পারছেন না। তাই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এই পুরস্কার আপনার থেকে তুলে নেওয়া হল’, বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোববারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। সোমবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে। তবে এ নিয়ে সু চি-র কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এসব কারণে ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের একাধিক পুরস্কার ও সম্মান খুইয়েছেন সু চি। গত মাসেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার সাম্মানিক নাগরিকত্ব খারিজ করেছে কানাডা। এবার সর্বোচ্চ মানবাধিকারের পুরস্কারও হাতছাড়া হলো সু-চি’র।