দর্পণ ডেস্ক : পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। পাশাপাশি তিনি আগাম জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। দেশটির সংখ্যালঘু তামিলরা পার্লামেন্টে তার জোটকে সমর্থন দিতে রাজি না হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন তার নিযুক্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন না। এটা বোঝার পরই তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।

গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। সঙ্গে সঙ্গে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রণিল বিক্রমাসিংহে নিজেকে শ্রীলঙ্কার বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তাকে সমর্থন করেন পার্লামেন্ট স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। এ নিয়ে সেখানে মারাত্মক এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। তার মধ্যে শুক্রবার দিন শেষে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেন। এতে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকট জটিল থেকে জটিলতার দিকে যাচ্ছে। শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার গেজেট নোটিফিসেশনে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া কার্যকর হবে। নতুন পার্লামেন্ট বসবে আগামী ১৭ জানুয়ারি। তার এমন ঘোষণার তাৎক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা ও বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি এক টুইটে প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তকে জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রকে ডাকাতি করার অভিযোগ এনেছে তার দল ইউএনপি।

ইউএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেয়ার কর্তৃত্ব আছে প্রেসিডেন্টের। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা তার নেই। তাই তারা রণিল বিক্রমাসিংহের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দেয়ার জন্য পার্লামেন্টে ভোট দাবি করেছেন। অন্যদিকে গত ২৬ অক্টোবর বরখাস্ত হওয়ার পর রণিল বিক্রমাসিংহে সরকার নির্ধারিত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি এ পর্যন্ত বাইরে আসেননি। ওদিকে একজন কেবিনেট মন্ত্রী দয়াসিরি জয়াসেকারা আল-জাজিরাকে বলেছেন, রণিল বিক্রমাসিংহে পদ থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া ছাড়া প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি সংবিধানের অধীনে থেকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। একটি নির্বাচনের জন্য এটাই উত্তম পন্থা। ওই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে জনগণ কী চায়।

তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা নিযুক্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে। তিনি এ বিষয়ে একটি টুইট করেছেন। তাতে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সত্যিকার অর্থে জনগণের ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং স্থিতিশীল দেশ গঠনের পথ বেরিয়ে আসবে।

দেশটিতে ক্ষমতা নিয়ে ‘যুদ্ধ’ শুরু হয় প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে। সেখানে পার্লামেন্টে আসন ২২৫টি। এর মধ্যে কোনো দল ১১৩ আসন পেলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং সরকার গঠন করতে পারে। রণিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্তের পর সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ দিতে বিক্রমাসিংহে নতুন করে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানান। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু তামিলদের প্রতি সরকার তাদেরকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা সাফ মাহিন্দ রাজাপাকসেকে অবৈধ সরকার বলে ঘোষণা দিয়ে তাকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে প্রেসিডেন্ট বুঝে যান পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করলে সেখানে তিনি ও মাহিন্দ রাজাপাকসে হেরে যাবেন। এটা বুঝতে পেরেই তিনি শুক্রবার দিন শেষে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।