মোঃশাহাগির মৃধা,সরাইল , ব্রাহ্মণবাড়িয়া: গ্রাহকসেবায় হয়রানি, চেক প্রতারনা, গ্রাহকের দাবি পরিশোধে তালবাহানা, গ্রাহকের মৃত্যু দাবি টাকা নিয়ে হেরফের, স্বেচ্ছাচারিতা সহ নানা অভিযোগ এনে ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিপলু বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগী গ্রাহক ও বীমা কর্মীরা।
গত রবিবার (৪ নভেম্বর) সরাইল উপজেলা রিপোটার্স ইউনিটির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বীমা গ্রাহক ইসরাত জাহান সেতু অভিযোগ করেন, ডায়মন্ড লাইফে ২০১৫ সালে তিনি একটি বীমা পলিসি গ্রহণ করেন। পলিসি নম্বর ১২৫০০০০০২৭১৩। তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের পর বীমা চুক্তি অনুযায়ী বোনাস বাবদ গত ১১/০৪/২০১৮ইং তারিখ উল্লেখিত কোম্পানির পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ৩৫৫৫৯০১০৪৩৭৭৫ নম্বর হিসাবের CA 5620055নং চেকে ১০,০০০/ টাকা দেন তাকে। এ চেকে স্বাক্ষর রয়েছেন কোম্পানির এমডি পিপলু বিশ্বাস, পরিচালক শাহাব উদ্দিন খান ও ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াদ মাহমুদের। কিন্তু  চেকটি তিন দফা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলেও পাস হয়নি; চেকটি “ডিজঅনার” হয়। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির এমডি`র সঙ্গে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে নাটকীয় আচরণ করেন।
ইসরাত জাহান দাবি করেন, তার মতো অনেক গ্রাহক ডায়মন্ড লাইফের এই এমডি`র দ্বারা আজ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পিপলু বিশ্বাস এমডি হিসেবে অযোগ্য ও ডায়মন্ড লাইফের কলঙ্ক। এই চেকের ব্যাপারে প্রতারনার মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে ভূক্তভোগী এই বীমা গ্রাহক জানান।
আরেক ভূক্তভোগী শারীরিক প্রতিবন্ধী মোছাঃ তাকলিমা আক্তার জানান, তার মাতা আহাদা খাতুন ডায়মন্ড লাইফে বীমা করেছিলেন। পলিসি নম্বর ১২৫০০০০০৬৪৪৫। বীমা চালু অবস্থায় গত ২৮/০৯/২০১৭ইং সালে আহাদা খাতুন মারা যান। বৈধ নমিনী হিসেবে বীমার দাবি এক লক্ষ টাকা পেতে কোম্পানির চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যথা সময়ে দাখিল করা হলেও এখন পর্যন্ত এ দাবি পরিশোধ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির এমডি পিপলু বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হলেও তিনি নানাভাবে ঘুরাচ্ছেন। এ ব্যাপারে শারীরিক প্রতিবন্ধী তাকলিমা আক্তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়েছেন।
ভূক্তভোগী মোছাঃ শান্তা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনের ডায়মন্ড লাইফে একটি বীমা ছিল। পলিসি নম্বর ১২৫০০০০০৪৭৫১। বীমা চালু অবস্থায় সে মারা গেলে মৃত্যুদাবির ৫০,০০০/টাকার স্থলে মাত্র ৩৫,০০০/ টাকার চেক প্রদান করেন খোদ এমডি। নমিনী হিসেবে আমি এর ব্যাখ্যা চাইলে কোম্পানির সরাইল অফিসে এমডি পিপলু বিশ্বাস আমাকে জানান এটি অনাকাঙ্খিত ভুল। মৃত্যু দাবির বাকি ১৫ হাজার টাকা তিন দিনের মধ্যে দেওয়ার ওয়াদা করে যান তিনি। কিন্তু ১৯ মাসেও এ টাকা দেননি তিনি। এখন ফোন দিলে নানা কথা বলেন। কোম্পানির একজন এমডি হিসেবে পিপলু বিশ্বাসের এ প্রতারনা মোটেও উচিত হয়নি। ভূক্তভোগী শান্তা আক্তার দাবি করেন, বীমা শিল্পে এই ধরণের নির্লজ্জ এমডি কলঙ্কলেপন করার আগেই তাকে প্রতিরোধ করা জরুরি।
বীমা গ্রাহক মোছাঃ রোপা আক্তার (পলিসি নম্বর ১২৫০০০০০২৬১৫) অভিযোগ করেন, বিগত ২২/০৫/২০১৭ইং তারিখে কোম্পানির এন.সি.সি ব্যাংকের 0020210028574 হিসাবের C5011056 নম্বর চেকে ২০,০০০/টাকা দিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে চেকটি কয়েকদফা ফেরত আসে এবং ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে ছয়মাস পর এই টাকা আমাকে ক্যাশে নিতে হয়। এ সমস্যার সন্মৃখীন হয়ে অনেকে বীমা পলিসি বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সরাইল উপজেলার ডায়মন্ড লাইফের কর্মী মোঃ মাসুদ মিয়া বিএম (কোড ১২৫০০০১), মোঃ ইমন মিয়া এফএ(কোড ১২৭০০০০১৬), মোঃ রাকিবুল ইসলাম সানি এফএ (কোড ১২৭০০০০১৫), মোহাম্মদ নাজমুল এফএ(১২৫০০০০০২), মোছাঃ বিলকিস বেগম আর.সি (কোড ৫০০১১২) সহ ভূক্তভোগী আরো কয়েকজন বীমা কর্মী অভিযোগ করে জানান, তারা ডায়মন্ড লাইফে শুরু থেকেই কাজ করছিলেন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসের দিকে এ কোম্পানিতে এমডি হিসেবে যোগদান করেন পিপলু বিশ্বাস। তিনি এসে কোম্পানিতে একটি নৈরাজ্যময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। নতুন ও পুরাতনদের আলাদা করেন কৌশলে। পুরাতন সংগঠনের অফিসগুলোতে গ্রাহক সার্ভিসে স্বজনপ্রীতি শুরু করেন। অফিসগুলোতে প্রায় দেড় বছর যাবত গ্রাহকের দলিল বিতরণ বন্ধ রেখেছেন। গ্রাহকের নানাবিধ পাওনাদি সঠিক সময়ে প্রদান না করায় সরাইল অফিসটি এখন বন্ধ হওয়ার পথে এসে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির সরাইল সার্ভিস সেলের ইনচার্জ ও কোম্পানির সিনিয়র সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (উন্নয়ন) মোঃ আরিফুল ইসলাম সুমন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চেক ডিজঅনারের বিষয়টি প্রথমেই প্রধান কার্যালয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছিল। তার পরামর্শে কোম্পানির ওই একাউন্টে আমি ১০,০০০/ টাকা জমাও করি। তারপরও এ চেকটি পাস হয়নি। এখানে গ্রাহকসেবায় কিছু সমস্যা রয়েছে। আশা করি অচিরেই এর সমাধান হবে, এসব নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা অব্যাহত আছে।