দর্পণ ডেস্ক : রংপুরে রোববার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এ আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে মইনুলকে আদালতে আনা ও পুনরায় কারাগারে নেয়ার সময় আদালত চত্বরে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ব্যারিস্টার মইনুলকে যে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়, তাতে ঝাড়ু, জুতা ও ডিম ছুড়ে মারতেও দেখা যায়। পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত জামিন আবেদনের শুনানি হয়। এ সময় তার জামিনের বিরোধিতা করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। অন্যদিকে মইনুলের জামিনের আবেদন জানান ঢাকা থেকে আসা অ্যাডভোকেট এম মাসুদ রানাসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আদালত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এ সময় বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
পরে আদালত থেকে মইনুল হোসেনকে কারাগারে নেয়ার জন্য যখন পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখন হঠাৎ করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আদালত চত্বরে আগে থেকেই উপস্থিত থাকা মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হয়। একই সময়ে আদালত চত্বরে মামলায় হাজিরা দিতে আসা যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে দু’পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
এ সময় একদল যুবক মইনুলের গাড়িতে হামলা চালায়। তারা মইনুলের গায়ে জুতা-ডিম ও ঝাড়ু ছুড়ে মারে। এতে তার পরনের জামা-কাপড়ে পচা ডিমের ময়লা লেগে যায়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ৬ রাউন্ড টিয়ালগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবী দিলশাদ ইসলাম মুকুল ও ছাত্রদল নেতা নয়নসহ অন্তত ৬ জন আহত হন।
অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেন, দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক এবং সিনিয়র আইনজীবীকে যেভাবে আদালত চত্বরে সরকারদলীয় লোকজন হামলা চালিয়ে আহত করেছে, সেটি কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না।
তিনি ব্যারিস্টার মইনুলের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনার নিন্দা জানান রংপুর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবতাব হোসেন।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আলতাব হোসেন জানান, হাজিরা দিতে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা স্লোগান দেয়ার কারণেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় মামলা হবে কিনা তা পরে বলা যাবে।
রংপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল নারী জাতিকে অপমান করেছেন। সে কারণে আমরা নারীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ-নিন্দা জানানোর জন্য শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছি। কেউ যদি তার ওপর হামলা চালিয়ে থাকে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক জানান, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তি করায় ২২ অক্টোবর মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে রংপুরে মানহানির মামলা করেন নারী অধিকারকর্মী মিলিমায়া বেগম।
ড. কামালের ক্ষোভ-নিন্দা : এদিকে আদালত চত্বরে মইনুল হোসেনের ওপর হামলা এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পুলিশি হেফাজতে তার ওপর আক্রমণ ন্যক্কারজনক কাজ। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাই।