সংখ্যালঘু তামিলরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যেসব তামিল সদস্যকে বন্দী করা হয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমান নেই। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মামলাও করা হয়নি।

শ্রীলঙ্কায় কারাগারে বন্দী সংখ্যালঘু তামিলদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন তামিল টাইগার্স সদস্যদের খুব শিগগিরই মুক্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে ও সংসদ সদস্য নামাল রাজাপাকসে। তামিল জনগোষ্ঠীর দাবীর প্রেক্ষিতে মুক্তির দেয়ার কথা বললেও এর পেছনে রয়েছে দেশটির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার বড় সমাধান।

নামাল রাজাপাকসে এক টুইটার পোস্টে বলেন, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে এই ইস্যুতে খুব শ্রীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবেন। ২০০৯ সালে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) বা তামিল টাইগার্স নামে পরিচিত তামিল স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধের অবসান হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব এলটিটিই সদস্যকে বন্দী করা হয়েছে তারা রাজনৈতিক বন্দী নয়।

নামালের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে আসলো যার একদিন পর দেশটির সংসদে ঠিক হবে রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন না-কি সংসদ সদস্যদের অনাস্থা ভোটে পদচ্যুত হবেন। কেননা নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে আগামীকালের সংসদ অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে ক্ষমতাচ্যুত হবেন তিনি।

আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় ফের প্রধানমন্ত্রীর রদবদল হতে পারে

উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে রনিল বিক্রমসিংহকে বরখাস্ত করেন। ওই দিন রাতেই তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেন।

বরখাস্তের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ২৭ অক্টোবর পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন ডাকেন বিক্রমসিংহ। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য তার পক্ষে রয়েছেন দাবি করে তিনি এ অধিবেশন ডাকেন। বিক্রমসিংহের এ দাবির পর পার্লামেন্টের অধিবেশন ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন সিরিসেনা। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পার্লামেন্টের অধিবেশন ১৬ নভেম্বর থেকে এগিয়ে ৫ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেছেন তিনি।

সংখ্যালঘু তামিলদের রাজনৈতিক জোট তামিল ন্যাশনাল অ্যালাইন্স (টিএনএ) রাজাপাকসের এরকম নিয়োগকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজাপাকসেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রনিল বিক্রমসিংহকে সমর্থন দেবে তারা। যদি এমনটাই হয় তাহলে বিপদে পড়বেন রাজাপাকসে।

কেননা দেশটির সংসদে মোট ২২৫ টি আসনের মধ্যে তামিল ন্যাশনাল অ্যালাইন্সের ১৫ জন সংসদ সদস্য আছেন। এদিকে এখনো বিক্রমসিংহের প্রতি সমর্থন রয়েছে ১০৩ জন সংসদ সদস্যের। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট পাশ করতে হলে প্রয়োজন পড়বে ১১৩টি ভোটের। যদি তামিল তামিল ন্যাশনাল অ্যালাইন্স ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বিক্রমসিংহকে সমর্থন দেয় তাহলে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন রাজাপাকসে।

তামিল ন্যাশনাল অ্যালাইন্স রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী পদে রাখা না রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই বাবা রাজাপাকসেকে বাঁচাতে তামিলদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন নামাল। তবে সত্যিই দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী তামিলদের মুক্ত করা হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তবে সবার চোঁখ এখন আগামীকালের (৫ নভেম্বর) সংসদ অধিবেশন। কালকেই জানা জানা যাবে কে হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।