ফাইল ছবি : বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও ড. কামাল হোসেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে রাজাকার বলেছেন সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেছেন, ‘সোজা কথা, কামাল হোসেন একজন রাজাকার।’

জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িকতার সেকাল-একাল, আমাদের কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনায় তাঁর বক্তব্যে বিচারপতি মানিক এ মন্তব্য করেন।

বিচারপতি মানিক বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের জোট গড়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করছেন। যারা গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে আজ আঁতাত করেছেন তিনি।’

মানিক বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হইনি এ জন্য যে কামাল হোসেন নিজেও তো তাদেরই একজন। সেদিন একজন (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মাদ ফরাসউদ্দিন) বলেছেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যায় কামাল হোসেন জড়িত ছিল এই মর্মে অ্যাভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে, কথাটা উনি কিন্তু ভুল বলেননি, উনি সেই সময় বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।’

বিচারপতি মানিক মিট্টা খা নামে এক পাকিস্তানি জেনারেলের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘মিট্টা খা ২০০৮ সালে ডিফেন্স জার্নাল নামে একটি ম্যাগাজিনে লিখেছেন,৭১-এর ২৮ মার্চ কামাল সাহেব মিট্টা খাকে ফোন করে বলল, সবাই তো চলে গেছে ভারতে, আমি যেতে চাই না, আমি মুক্তিযুদ্ধ-টুদ্ধ করব না, কিন্তু আমাকে ওই মুক্তিযোদ্ধারা মেরে ফেলবে, আমাকে দয়া করে রক্ষা করুন। মিট্টা খান তাকে ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছেলেন, প্রোটেকশন করেছিলেন এবং ২৯ মার্চ কামাল সাহেবকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘তিনি আরও লিখেছেন- পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর উনি প্রতি মাসে কামাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেন। কামাল সাহেব তখন তার শ্বশুর এবং তার সম্পর্কে শ্বশুর এ কে বদি আল্লাহবক্স-খোদাবক্স, খুব নামকরা উকিল ছিলেন, তার সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন।’

অর্থনীতি সমিতির গত আগস্টের এক অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘ফরাসউদ্দিন সাহেব বলেছেন সেদিন, কামাল হোসেনকে ওখানে (পাকিস্তানে) রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার জন্য। কারণ তারা বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেয়ার জন্য সব ঠিকঠাক করে রেখেছিল। আর এই ফাঁসি দেয়ার জন্য সাক্ষী দরকার ছিল। তাই কামাল হোসেনকে সাক্ষীর জন্য রেখেছিল।’

বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আইএসআই অত্যন্ত করিৎকর্মা একটি গোয়েন্দা সংস্থা, যখন আবার বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হলো তখন আবার কামাল সাহেবকে সেই প্লেনে উঠিয়ে দিয়েছে। এই হলো কামাল হোসেনের ইতিহাস, উনি একজন রাজাকার।’

সাবেক বিচারপতি মানিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের আলোচনা সভায় জিয়াউর রহমানেরও সমালোচনা করে বলেন, ‘কথাটা কিন্তু আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, উনি তো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই করেননি। এটা আজকে স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নকশা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ‘
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সম্মিলিক সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভি’র এডিটর অন চীফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিন্নাত হুদা, সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়।
হারুন হাবিব বলেন, সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিতে একটি অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে দুর্বল মানসিকতার মানুষ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।