অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বলেন, ‘এসপি স্যার আমাকে নিহতের বাড়িতে গত পরশু রাতে পাঠান। স্যারের নির্দেশে আমি নিহতের পরিবারকে বুঝাতে সক্ষম হই। তাই বুধবার তারা মামলা দিয়েছে। মামলা নং- ১৮ তাং ৩১-১০-১৮। মামলায় হত্যা, হত্যার সহায়তা এবং পথরোধের অভিযোগ করা হয়েছে’।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বড়লেখার চান্দগ্রাম বাজারে গত রোববার ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় বিনা চিকিৎসায় ৭ দিনের শিশুকন্যা খাদিজার মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় বাদী হয়েছেন শিশুটির চাচা হাজী আকবর আলী। আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত নামা- ১৬০/১৭০ জন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন,‘শিশুটিকে বহনকারী ওই অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন ছিল না। ফলে বড়লেখা হাসপাতাল থেকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ১ ঘন্টার মধ্যে রোগী মারা যায়’।

শিশুটির বাবা কুটন মিয়া জানান, স্ত্রীর শরীর খারাপের খবর পেয়ে ২১ অক্টোবর তিনি দেশে ফেরেন। পরদিন স্ত্রীকে সিলেটের নর্থইস্ট হাপতালে ভর্তি করেন এবং এদিন সকাল সাড়ে দশটায় শিশু কন্যার নরমাল ডেলিভারি হয়। ২৪ অক্টোবর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। শিশু কন্যার নাম খাদিজা আক্তার রাখার পরিকল্পনাও করে রাখেন। কিন্তু তা প্রকাশ করেননি। ভেবেছিলেন আকিকার দিন প্রকাশ করবেন। কিন্ত মেয়ের নাম প্রকাশের আগেই সে চলে গেল না ফেরার দেশে।

কুটন মিয়া অভিযোগ করেন, বিয়ানীবাজার হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে ফেরার পথেও পরিবহণ শ্রমিকরা দাসেরবাজারে অ্যাম্বুলেন্স আটকায় এবং চালককে মারধর করে। এতে বাড়ি ফিরতে অন্তত ৩০ মিনিট বিলম্ব হয়। সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে গ্রামের সার্বজনিন গোরস্থান মাঠে জানাজা শেষে লাশ দাফন করেন। জানাজায় ইমামতি করেন শিশুকন্যার চাচা হাফেজ কাওছার আহমদ।
কুটন মিয়া তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করে বলেন, যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রাম আর ধর্মঘটের নামে যেন বিনা চিকিৎসায় আর কোনো বাবা-মায়ের সন্তানকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া না হয়।

অ্যাম্বুলেন্স চালক সিপন আহমদ জানান, প্রথমে তিনি বড়লেখার মহদিকোনায় পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েন। এখানে প্রায় আধঘন্টা আটকানোর পর ছেড়ে দেয়া হয়। পরে দাসেরবাজারে আরো ২০-২৫ মিনিট এবং চান্দগ্রাম বাজারে প্রায় দেড়ঘন্টা আটকে রেখে তাকে মারধর করে শ্রমিকরা। শিশুর মা-বাবা হাতে পায়ে ধরেও তাদের মন গলাতে পারেননি। বাচ্চার মৃত্যুর পর তারা গাড়ি ছেড়ে দেয়।

শিশুটির মা ছায়রা বেগম নবজাতক মেয়ের মৃত্যুর নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনা বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার পুড়ির ছরখাত অর(মৃত্যুর মুখে) আর তারা (পরিবহন শ্রমিকরা)কইন (বলে)আমি তামশা করিয়ার’।

তিনি বলেন,‘গত শনিবার রাইত (রাত) তাকি (থেকে) দুধ খাওয়া বন (বন্ধ) করায় সকালে আসপাতালে (হাসপাতাল) লইয়া গেলে ডাক্তর সাব জলদি (দ্রুত) ওসমানী আসপাতালো লইয়া যাওয়ার কথা কইন। বাচ্চার বাপ পট করি (তাড়াতাড়ি) অ্যাম্বুলেন্স চাইয়া রওয়া দেইন, কিন্তু পথে দুই জাগায় পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি আটকায়। মিনতি করায় ই দুই জাগা (স্থান) তাকি ছাড়া পাইলেও তিন নম্বর জাগা চান্দগ্রাম বাজারে ২০-২৫ জন এমনভাবে আটকায় কোনভাবেই ছাড়ছে না। আমার কোল ৭ দিনর পুড়ির (মেয়ের) ছরকাত (শেষ নিঃশ্বাস) অর বউত কলে (বিভিন্নভাবে) তারারে কইলাম। তারা কয় আমি তামশা করিয়ার। ডাইভাররে (ড্রাইভার) নামাইয়া মারধর করে।’