দূর থেকে দেখে গাছটি সাধারণ একটি গাছ বলে মনে হবে। কিন্তু যোগাযোগের জন্য এই গাছটিই একমাত্র ভরসা। মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম গ্রামের মাঝে থাকা একটি উচুঁ গাছ। গাছ দিয়ে মোবাইলের নেটওয়ার্ক খোঁজা, অদ্ভুত শোনাতে পারে। কিন্তু ঘানার একটি গ্রামের বাসিন্দাদের এখন সেই পথই বেছে নিতে হয়েছে। কারণ মোবাইলে নেটওয়ার্ক পেতে গাছই একমাত্র ভরসা।

আঞ্চলিক রাজধানী তামালি থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম বালিসিনিয়া যেতে দু’ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে পঞ্চাশটি পরিবার বসবাস করে। তাদের বেশিরভাগেরই মোবাইল ফোন আছে। কিন্তু এখানে ফোন কল করা বা গ্রহণ করা খুবই কঠিন।

গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছরের আবুবকর আল হাসান বলেন, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পাওয়া এখানে খুবই কঠিন। এখানকার সব মানুষই সিগন্যালের সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে যখন আপনি এখন কোন বন্ধু বা পছন্দের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তখন সেটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

এমনকি যখন কোন অন্তঃসত্ত্বা নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন অ্যাম্বুলেন্স পেতেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি। এই নেটওয়ার্ক সমস্যার একটি অভিনব সমাধান খুঁজে বের করেছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত একটি বিশাল গাছ তাদের যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছে।

দেখা যায়, গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে অন্তত বিশজন ব্যক্তি ফোন করছেন বা কথা বলছেন। তাদের অনেকে গাছের ডালের সঙ্গে তাদের ফোন বেঁধে রেখেছেন, আবার কেউ কেউ গাছের মগডালে উঠে গেছেন।

এই গাছটি এখানকার মানুষের মোবাইল যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র। দুপুর তিনটার দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক খোঁজার এই কর্মকাণ্ড শুরু হয়, যেখানে সময় এবং ধৈর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সব গ্রামবাসীর কাছেই এই ম্যাজিক মোবাইল গাছ অনেক কিছু।

গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, এই গাছটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো গ্রামটি এর ওপর নির্ভরশীল। কারণ এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা মোবাইল সিগন্যাল খুঁজে পাই। যেখান থেকে আমরা ফোনকল করতে পারি। তাই আমরা গাছটিরও অনেক যত্ন নেই। এই গাছটি যদি পড়ে যায়, পুরো গ্রাম বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

এক নারী বলেন, এই গ্রামে বসে আমরা কোন ফোন কল করতে পারি না। আমরা জানি না, কেন বারবার কল ড্রপ করে যায়। যা এই গ্রামের নারীদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে বসে আমরা ফোনে কথা বলতে পারি।
রাজধানী আক্রায় টনি হাসান নামের একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাখ্যা করছিলেন এই গাছটির মোবাইল নেটওয়ার্কের রহস্য নিয়ে। তিনি বলেন, সেল সাইটগুলো থেকে এরকম জায়গা সাধারণত অনেক দূরে হয় সুতরাং সেখানকার মানুষজন সিগন্যাল ঠিকমতো পায়না। মোবাইল সিগন্যাল লাইটের আলোর মতো কাজ করে। এর সামনে কিছু পড়লে সেটি প্রতিফলন ঘটায়। যেহেতু জায়গাটি দূরে, সেখানে যা কিছুই সামনে পড়ুক না কেন, তা প্রতিফলিত হবে।

গাছ এজন্য ভালো উদাহরণ, গাছের ডালপালা এই প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ফলে সেখানে গাছটির কারণে সিগন্যাল গভীর তৈরি হচ্ছে। হয়তো আশপাশের এলাকার তুলনায় গাছটি সবচেয়ে বড় বা লম্বা সুতরাং সেখানে এরকম পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন হাসান।

সরকার বলছে, তারা চেষ্টা করছে মোবাইল নেটওয়ার্ক সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার। সেটা না হওয়া পর্যন্ত আবু বকরের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের গাছের সাহায্যেই মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকতে হচ্ছে।