ইন্দোনেশিয়ায় বিমান বিধ্বস্তের উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। এখন পর্যন্ত বেশকিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক শিশুর দেহাবশেষও রয়েছে। ১০ ব্যাগ দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য জাকার্তায় নেয়া হয়েছে।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জেলে জানান, তাদের নৌকা যখন সমুদ্রে ছিল ঠিক সেই সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানটি নাক বরাবর পানিতে ডুবে যায় এবং এক ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। এরপর চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিটি জানিয়েছে, আরোহীদের মধ্যে ১৭৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক, একজন শিশু, দুই নবজাতক, দুইজন পাইলট এবং ৬ জন ক্রু ছিলেন। বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন ভারতীয়, ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন ২০ জন এবং ইতালির একজন সাবেক সাইক্লিস্ট ছিলেন তাদের মধ্যে।
বিমানটি সমুদ্রে ৩০ থেকে ৪০ মিটার গভীরে ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমানটির ব্ল্যাকবক্সের খোঁজ চলছে। সেটি খুঁজে পেলে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে কিছুটা হলেও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
বিধ্বস্ত বিমানের জরুরি ট্রান্সমিটার থেকে পাঠানো কোনো দূরবর্তী সংকেত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মুহাম্মাদ সিয়াগি। রোববার রাতেই বালি থেকে জাকার্তা ফেরার পথে লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানটিতে গোলযোগ দেখা দিয়েছিল।
ফ্লাইট ট্রেকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এ এর উল্লেখ রয়েছে৷ সেদিন সন্ধ্যায় বালি থেকে রওনা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এর গতি খুব বেড়ে গিয়েছিল এবং এটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে হঠাৎ করেই ৮৭৫ ফুট নিচে নেমে গিয়েছিল বিমানটি, যখন এটির আসলে উপরে ওঠার কথা।
বিধ্বস্ত বিমানের দুই যাত্রী তাদের অভিজ্ঞতার কথা ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছিলেন। কেবিনে আলোর সমস্যা এবং এয়ারকন্ডিশনিংয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন তারা। এছাড়া যাত্রার শুরু থেকে অবতরণ পর্যন্ত ইঞ্জিনে একধরনের অদ্ভুত শব্দের কথাও উল্লেখ করেছেন তারা। রোববার রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে বিমানটি জাকার্তায় অবতরণ করে।এরপর প্রকৌশলীরা সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর পরদিন সোমবার ভোরে ১৮৯ জন আরোহী নিয়ে বিমানটি যাত্রার কিছুক্ষণ পর জাভা সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর অনলাইনে বিমানের একটি ‘মেনটেনেন্স লগ’ ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা বিধ্বস্ত বিমানটির কিনা সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ তাই দুর্ঘটনার কারণ এখনো নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়৷