গণিত কথাটি এসেছে গণনা করা থেকে, কথাটির অর্থ হল গণনা বিজ্ঞান অথাৎ যে বিশেষ জ্ঞান দ্বারা গণনা করা হয়ে থাকে তাকেই গণিত বলে।কথাটি অনেক দিনের পুরোনো। আর্যদের প্রাচীন গ্রন্থ বেদ, সেই বেদের বিভিন্ন জাগায় গণিত কথাটির বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা আছে। বেদের একটি অংশের নাম বেদাঙ্গ জ্যোতিষ। পন্ডিতগণ মনে করেন, বেদাঙ্গ রচনা করা হয়েছিল যীশু খৃষ্টের জন্মের অন্তত ১২০০ বছর বা তারও আগে। প্রাচীন আর্য বা হিন্দুরা গণিতকে বিজ্ঞান হিসেবে যে কত উচু আসন দিয়ে ছিলেন তার প্রমান পাওয়া যায় বেদাঙ্গের একটি বাক্য থেকে, তাতে লেখা আছে, ময়ুরের মাথায় যেমন শিখা, সাপের মাথায় যেমন মণি, ঠিক সে রকম বিষয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হল গণিত। তাই গণিত কেন শিক্ষার্থীরা ভয় পাবে এই প্রক্রিয়াকে মাথায় রেখে, গণিত ভীতি দুর করা লক্ষে আমাদের শিক্ষাক্রম প্রক্রিয়া পরিচালনা করা উচিত। গণিতের ইতিহাস কুইজ ও মজার ধাধা বইটিতে মোহাম্মদ জিলুর রহমান গণিতকে সহজ সুন্দর ও জনপ্রিয় করার জন্য খুব স্বাভাবিক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বর্তমান শিক্ষার্থীরা গণিত বিষয়ক সাহিত্য সংশ্লিষ্ট বই পড়ে না। তা হলে অবশ্যই গণিত ভীতি দুর হতো। প্রতিটি বিষয়বস্তু ও জীব জগতের জন্ম থেকে মৃত্যু এবং মৃত্যু পরর্বতী সময কাল থেকে গণিত জড়িয়ে আছে। তৎপরর্বতী একটি জীবনে খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রে গণিতের হিসাব ছাড়া পরিকল্পিত জীবন যাপন সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি মানুষের গণিত জেনে সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে ভুমিকা রাখা জরুরী। প্রকৃতি থেকে গণিত জেনে কৃষক, দিনমজুর, সাধারণ মানুষ তাদের অবস্থার উন্নয়ন করছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কল্পে “গণিত কেন শিক্ষার্থীরা ভয় পায়” গণিত ভীতির কারন ও তার অবস্থান যাচাই ও মূল্যায়ন করা উচিত। “গণিত কেন শিক্ষার্থীরা ভয় পায়” শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধান সমস্যা কিনা এবং তার সমাধান কিভাবে করা যায় সে সম্পর্কে গণিতশিক্ষকদের ও সমাজের সৃজনশীল বুদ্ধিজীবিদের সুপারিশ গ্রহন করতে হবে। “গণিত কেন শিক্ষার্থীরা ভয় পায়” গণিত ভীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই মুহূর্তে কি পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত সে সম্পর্কে গণিতবিদগণের এগিয়ে আসতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী, চিন্তা চেতনা ও গণিত ভিত্তিক প্রতিক্রয়া, অভিমত সম্বলিত তথ্য সংগ্রহ ও সঞ্চালন পূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উত্তম পন্থা গ্রহন করতে হবে। সাধারন মানুষের প্রযুক্তি উন্নয়নের স্বপ্নকে অর্থবহ ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। গণিত সব সময় বাস্তবতা ও সত্যের উপর দাঁড়িয়ে মানুষকে পথ চলতে সাহায্য করে। গণিত জ্ঞানে দক্ষ ও সামর্থ তারুণ্যে নির্ভর, সাহসী ও নিরপেক্ষ সত্য উৎঘাটনে আতœবিশ্বাসী শিক্ষিত তরুন দেশ গঠনে সঠিক ভুমিকা রাখতে পারবে।
গণিত মানেই পথ চলা, গণিত মানেই আগামীর আলোর দিশারী, সুন্দর জীবনের অনাগত ভবিষৎ এর প্রতিটি পদক্ষেপ। যা ব্যক্তি জীবনকে বাস্তবতার তরী পারাপারে পরিকল্পিত জীবনকে স্বার্থক করে তুলে। বিশ্বের যে সব দেশ গণিত থেকে দুরে সরে গিয়েছে, তারাই আজ আধুনিক বিশ্বের উন্নয়নের গতি থেকে পিছিয়ে পড়েছে। তাই আমাদের সন্তানদের গণিত ভীতি দুর করা উচিত।দৈনন্দিন জীবনে গণিতের প্রয়োগ, যা সাধারন মানুষ জানে, কিন্তু তারা মনে করে যে তারা গণিত জানে না। বাস্তবে জীবনে সাধারন মানুষ গণিত জানে কিন্তু সেই মানুষই মনে করে সে গণিত জানে না, কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রতিটি মানুষ গণিত প্রয়োগ করছে/ হাট /বাজার/ বাগান/অফিস/আদালত/রাস্তা/ব্যবসা ইত্যাদি স্থানে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের গণিত ভীতি দূরীকরণ, বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সার্বিক ও চিরন্তন অন্তর নিহিত সৌন্দর্যকে সাধারনের মাঝে উপস্থাপন সহ-গণিতকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্য গণিত নিয়ে উন্নয়নের পথ চলা সময়ের দাবী। গণিত নিয়ে যারা চিন্তা করেছে গণিতকে যারা সহজ ও স্বাভাবিক সুন্দর ও সৃজনশীল করে তুলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আর্যভট্ট, যিনি মাত্র ২৬ বছর বয়সে অৎুধনযধঃরুধ নামক গ্রন্থ রচনা করে বিশ্বে আলোরন ফেলে ছিলেন। তিনি প্রথম এশিয়ার প্রথম গণিতবিদ। এছাড়া অনেক গণিতবিদ আছেন যেমন-ইউক্লিড, রেনে দেকার্তে, পিথাগোরাস, জন নেপিয়ার, জন ভেন, স্যার আইজ্যাক নিউটন, জর্জ ক্যান্টর।
গবেষক কাজী মোঃ খায়রুল বাসার
সদস্য,
পাঠ্যক্রম কমিটি, গণিত বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর।: