ছবি: কলকাতা২৪x৭
দর্পণ ডেস্ক : দাদা পায়ে পড়ি রে, মেলা থেকে বউ এনে দে…’ এটা আমাদের জন্য শুধু গান হলেও সাগেন টুডু-মালতি হাঁসদাদের জন্য এই গানই সবচেয়ে বড় সত্যি। ওদের মেলা থেকে বউ খুঁজে নিতে হয়। আর এ রেওয়াজও বেশ প্রাচীন।
বিজয়াদশমীর পরদিন দুপুর থেকেই ওঁড়গোদার ভৈরবথানে মেলা হয়। মালতি-সাগেনরা ভিড় জমান ওঁড়গোদার পাটাবিঁধা মেলায়। এই মেলা থেকেই জীবনসঙ্গী খুঁজে নিয়ে বাড়ি ফেরে ওরা।
নবগঠিত ঝাড়গ্রাম জেলার শিলদার পাশেই ছোট গ্রাম ওঁড়গোদা। তার আশেপাশে মাহাত, আদিবাসী লোকের বসবাস। মালতি-সাগেনরা যেমন উৎসাহ নিয়ে দুর্গাপুজোয় সামিল হন, তেমনই পুজোর শেষে পাটাবিঁধা মেলাতে উপচে পড়ে ভিড়। ওঁড়গোদার যে মাঠে পাটাবিঁধা মেলা বসে সেখানেই বিরাজমান “বাবা ভৈরব”। এলাকার মানুষজন বিভিন্ন মানত নিয়ে মাঝে মাঝেই উপস্থিত হন ভৈরবথানে।
তবে পাটাবিঁধা মেলায় এই ভৈরবথানের চেহারা থাকে একেবারে অন্যরকম। বিজয়ার পরদিন দুপুর থেকেই প্রচুর মানুষ আসেন এই মেলাতে। বসে প্রচুর দোকানপাট। আলো দিয়ে সাজানো হয় পুরো মাঠ। মেলা চলে পরের দুদিন। দুদিন দেদার বিক্রি হয় হাঁড়িয়া, মহুয়া, দেশি, তেলেভাজা, বারোভাজা।
আর এই মহুয়া খেয়েই সাঁওতাল তরুণরা প্রেম নিবেদন করেন মেলায় আসা তরুণীদের। তরুণের প্রেমে সাড়া দিলেই কেল্লাফতে, আর কোনো বাধা থাকে না। সারারাত মহুয়া খেয়ে নাচ, কেনাকাটা। সকালে সোজা তরুণের বাড়িতে গিয়ে ওঠা। অবশ্য তারপর নিজেদের নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিক বিয়েও হয়।
বেলপাহাড়ি ব্লকের সরষাবাসা থেকে শনিবার বিকালে মেলায় এসেছেন বছর ২৫ এর যুবক জিৎরাই মান্ডি। কেতাদুরস্ত পোশাক, চোখে সানগ্লাস জিৎরাই জানান, ছোটবেলা থেকেই মেলায় আসছেন। দাদা এই মেলা থেকে বৌদি নিয়ে গেছে। মেলার খাওয়া, ঘোরা, কেনাকাটা তো রয়েইছে, সঙ্গে বড় আকর্ষণ মেলার প্রেম।
তিনিও কি এই মেলা থেকে জীবনসঙ্গিনী খুঁজে নিয়ে ফিরবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ইংরাজী গ্র্যাজুয়েট জিৎরাই জানান, দেখুন আগে এই মেলা থেকে অনেকেই বিয়ে করে বাড়ি ফিরত, কিন্তু এখন ততটা হয় না। মেয়েরা এখন পড়াশুনো করছে, দেখেশুনে তবেই ঠিক করছে জীবনসঙ্গী। তবে প্রেমে আপত্তি থাকে না।
নীলাবতি সরেনের বাড়ি বেলপাহাড়ির কালাপাথর। কাউকে মনে ধরেছে মেলাতে? এই প্রশ্নের উত্তরে ইতিহাসের ছাত্রী নীলাবতির সলজ্জ জবাব, আমি এসেছি মেলার টানেই। বিয়ে নিয়ে মোটেও ভাবছি না। পড়াশুনোও শেষ হয়নি। মেলাতে এখনও সেরকম কেউ চোখে পড়েনি।
তবে পছন্দের পুরুষ পেলে প্রেমে পড়তে আপত্তি নেই, সে কথা স্পষ্টই জানালেন সাঁওতাল তরুণী।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেকখানিই বদলেছে ওঁড়গোদা পাটাবিঁধার মেলার রূপ। তবে এই মেলা নিয়ে জঙ্গলমহলের সাঁওতাল জনজাতির লোকদের আগ্রহ কমেনি এতটুকুও। আর তা বোঝা যায় জিৎরাই-নীলাবতিদের মতো তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্ক লোকদের উপস্থিতিতে। প্রতিবছরই নিজের ঔজ্বল্য নিয়ে দশমীর পরদিন ওঁড়গোদার ভৈরবথানে শুরু হয় পাটাবিঁধা মেলা। সূত্র: কলকাতা২৪x৭