দর্পণ ডেস্ক : ‘বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা দেয়ায় পুরো রোহিঙ্গা কমিউনিটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঋণী। আমরা হিন্দুরা রোহিঙ্গাদের মাঝে দ্বিগুণ ঋণী হয়ে থাকলাম। মিয়ানমারে থাকাকালীন দুর্গাপূজাসহ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান কখনো করা হয়নি। নতুন কাপড়, পূজা-অর্চনার পণ্যসামগ্রী ও বিশাল প্রতীমা বসিয়ে এখন সরকারি সহযোগিতায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন করানো হচ্ছে। আশ্রয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক এ অনুগ্রহ রক্ত দিয়েও পরিশোধ করার নয়।’

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত শারদীয় দুর্গোৎসব নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হিন্দু রোহিঙ্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মধুরাম পাল।

শুধু তিনি নন, প্রকাশ্যে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতীমার সামনে দাঁড়িয়ে অর্চনা করতে পারা আরতি পাল, কৃষ্ণারানী দে, বাপ্পী চৌধুরী, সুমন আচার্য্যসহ রোহিঙ্গা হিন্দু কমিউনিটির শতাধিক বাসিন্দা।

দেখা যায়, মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তচ্যুত হিন্দু রোহিঙ্গারা তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে পালন করছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশালাকার প্রতীমা সাজিয়ে আনন্দমুখর সময় কাটাচ্ছেন তারা।

উখিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র দাশ রবি জানান, অন্যান্য বছর চারটি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হলেও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এবার উখিয়ায় ৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে।

কমিটির অর্থ সম্পাদক সজল কান্তি ধর জানান, প্রতিটি মন্দিরের আওতাধীন ৫৩৪ জন হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, শাড়ি, লুঙ্গি ছাড়াও নগদ তিন হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর উৎসব উপহারও দেয়া হয়েছে। ফলে বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, উখিয়া উপজেলায় দুর্গাপূজার পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মালম্বীদের প্রভারণা উৎসব উপলক্ষে উভয় ধর্মের হতদরিদ্র পরিবার প্রতি তিন হাজার টাকা করে দুই হাজার ১০১টি পরিবারে ৬৩ লাখ তিন হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বুধবার থেকে উপজেলা প্রশাসন বিতরণ শুরু করে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, প্রথমবারের মতো হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি খরচে পূজা উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আফছার, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের, জালিয়াপালং স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদসহ সংশ্লিষ্টরা কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আয়োজিত শারদীয় দুর্গোৎসব পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা। পূর্বে এসে রয়েছে আরও প্রায় সাড়ে তিন লাখ। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ। পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গার মাঝে রয়েছে ১০১টি হিন্দু পরিবারের ৪৫০ সদস্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কুতুপালং সরকারি বনভূমির ওপর তাদের আশ্রয় দেয়া হয়। সেখানেই তাদের জন্য দুর্গাপূজা উদযাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন। এ আয়োজনকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পুনঃপ্রমাণ বলে আখ্যায়িত করেছেন হিন্দু নেতারা।