দর্পণ ডেস্ক : দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে আজ সেতু এলাকায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি ফলক উন্মোচন ও রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই পারে এখন সাজ সাজ রব।

প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টার দিকে প্রথমে মাওয়ায় কাজের অগ্রগতি দেখবেন। এরপর ঢাকা-মাওয়া ও পাচ্চর-ভাঙ্গা এন ৮ মহাসড়কের কাজের অগ্রগতি দেখবেন, এরপর মাওয়া সাইডে রেললাইন লিংকের কাজের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের সেতু এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী নদীশাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। মাওয়ার দিকের সেতুর সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে মাওয়া গোল চত্বরে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। দুপুরে তিনি জাজিরা পয়েন্টে সেতুর কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিবচরে যাবেন এবং ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে জনসমাবেশে ভাষণ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শনিবার বিকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাট এলাকার জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ যেভাবে এগিয়ে চলছে, এতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলকে নিজের অঞ্চল মনে করেন। এ অঞ্চলটি নৌকার ঘাঁটি বলে চিহ্নিত এলাকা। প্রধানমন্ত্রী এখানে আগামী নির্বাচনে ভোট চাওয়ার জন্য আসছেন না।

এর আগে শুক্রবার পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উভয় পাশে ৬০ ভাগ কাজের অগ্রগতির ফলক উন্মোচন করবেন। জাজিরা পয়েন্টে ৫টি এবং মাওয়া পয়েন্টে ১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আরও ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ চলছে।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মা ব্রিজ রেল লিঙ্ক কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের প্রথম পর্যায়ের কাজ জাজিরা ও শিবচর হয়ে মাওয়া ও ভাঙ্গার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন করবে। আর পদ্মা বহুমুখী সেতুর মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের মধ্যে বৃহত্তর সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

চীন সরকার মনোনীত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি. চীন জিটুজি পদ্ধতির আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ ব্যাপারে চীন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড সেতুপথ নির্মিত হবে। এ সেতুপথে একাধিক লিফটসহ দুটি প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন ও দুটি লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে।

দুই পারে উৎসাহ-উদ্দীপনা : যুগান্তরের শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাস্তার দুই পাশে ও মোড়ে মোড়ে শত শত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে এলাকা সাজিয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। চারদিকে সাজ সাজ রব উঠেছে। জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকার মোকলেছ মাদবর বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বাপ-দাদার ভিটেমাটি দিয়েও আমরা শান্তি পাচ্ছি। এ সেতু হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে ও সহজ হবে। এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই।

যুগান্তর রিপোর্ট, মুন্সীগঞ্জ জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও সুধী সমাবেশ উপলক্ষে মাওয়া এলাকায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পদ্মাপারের মানুষসহ মুন্সীগঞ্জের সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সুধী সমাবেশ সফল করতে জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি।