অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফর থেকে ফেরার পর ‘স্বল্প সময়ের’ মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শুক্রবার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন ন্যাম ভবনে নিজের বাসায় আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র নেতাদের নিয়ে বসেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের ১৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নানক ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে প্রাণখোলা আলোচনা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী একজন ছাত্রও বিনা কারণে যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করা হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলাগুলোর বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে উপাচার্যের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দোষিদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। এই দোষিদের শাস্তি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও চায়।
আন্দোলনকারীরা তার কথায় আস্থা রেখেছেন জানিয়ে নানক বলেন, তারা আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
বৈঠকের পর ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ রাশেদ খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে থাকায় কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির জন্য ৭ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছি আমরা। ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। তারপর আমাদের বেঁধে দেওয়ার সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তাই আগামী ৭ মে পর্যন্ত রাজপথে তাদের কোনো কর্মসূচি থাকছে না জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্বঘোষিত ৩০ এপ্রিলের ছাত্র-শিক্ষক মতবিনিময় সভা করবেন তারা।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, দীর্ঘ দেড় ঘন্টা আলোচনা হয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার সঙ্গে। তারা আগামী মাসের সাত তারিখের মধ্যে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নামে করা অজ্ঞাতনামা মামলার চারটি শনিবারের মধ্যে উঠানোর ব্যাপারেও তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে হামলার মামলাটি থাকবে এবং এই মামলায় সুনির্দিষ্ট দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে আমাদের বলা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু এখনো তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ পায়নি। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘোষণা চলতি মাসের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। অন্যথায় মে মাসের শুরুতে আবারো আন্দোলনের হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল সামিট অন উইমেনে’ যোগ দিতে এখন অস্ট্রেলিয়া আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনের সফর শেষে রোববার দেশের পথে যাত্রা করবেন তিনি।