দর্পণ ডেস্ক : আগামী ১৩ অক্টোবর পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। মাওয়া প্রান্তে ১ হাজার ৩০০ মিটার নদীর তীর রক্ষা কাজের উদ্বোধন করবেন।
মঙ্গলবার মহাখালীর সেতু ভবনে পদ্মা রেল সংযোগ ও নদী তীর রক্ষা কাজের প্রস্তুতি সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, নির্দিষ্ট সময় আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে না পদ্মা সেতুর কাজ। কবে নাগাদ বহুল আলোচিত এ সেতুর কাজ হবে তা চলতি মাস শেষ নাগাদ জানানো সম্ভব হবে।
২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে আরিচায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায় সরকার আবারো মাওয়ায় ফিরিয়ে নেয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ফিরলে পদ্মা সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেয় সরকার। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুললে আলোচনার ঝড় ওঠে। মিথ্যা অভিযোগ করায় বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
২০১৪ সালের নভেম্বরে সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরের বছরে ডিসেম্বরে মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার জানান, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৫৯ ভাগ। মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৭০ ভাগ।
ভোটের আগেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হচ্ছে না তা নিশ্চিত করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ২৪ ঘণ্টাই পদ্মা সেতুর কাজ চলছে। কিন্তু কবে কাজ শেষ হবে তার দিনক্ষণ এখনই বলা যবে না। ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অক্টোবরের শেষ দিকে প্রকল্পের সর্বশেষ পরিস্থিতি বলা যাবে।
মন্ত্রী জানান, আপাতত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দেশের সম্পদ হয়ে থাকবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর পিলার স্থাপনে আর কোনো জটিলতা নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দুটি নদীর একটি পদ্মা। আমাজন নদীর চেয়ে ভয়ঙ্কর পদ্মা। তাই পিয়ার ও স্প্যান স্থাপনের সময় ঠিক রাখা যায়নি। ‘সয়েল কন্ডিশন’র কারণে কাজ করা যায়নি। এর কারণে প্রকল্পে বিলম্বে হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মায় স্প্যান স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪১টি স্প্যানের ছয়টি বসেছে। রেললাইন স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পদ্মা রেল সংযোগ নির্মাণ করা হবে। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প দেশের যোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পূর্ণগতিতে এই ‘মেগা প্রজেক্টের’ কাজ শুরু হবে।
উদ্বোধনের দিন থেকেই পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলবে; সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা ছিল। সরকারের অগ্রাধিকারের ১০ প্রকল্পের একটি ‘পদ্মা রেল সংযোগ’ প্রকল্পটি পিছিয়ে রয়েছে চীন ঋণচুক্তিতে বিলম্ব করায়। এ প্রকল্পে চীন ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সমঝোতা স্মারক সই হলেও ঋণচুক্তি হয় গত এপ্রিলে। মঙ্গলবারের প্রস্তুতি সভায় রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, তিনি আশাবাদী ২০২২ সালে নির্ধারিত সময়েই পদ্মা রেল সংযোগের কাজ শেষ হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের চলমান কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের কাজের ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে থাকবে দুই লেনের সার্ভিস রোড।
আওয়ামী লীগের এমপি নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, মৃনাল কান্তি দাস, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাগুফতা ইয়াসমিন এমেলি, বিএম মোজাম্মেল প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন রেলওয়ে, সড়ক বিভাগ ও সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।