দর্পণ ডেস্ক : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী শনিবারের জনসভায় ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এই জনসভায় ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিতের মাধ্যমে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় সরকারবিরোধী প্রধান এই দলটি। জনসভার জন্য এখন পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও দলীয় প্রস্তুতি থেমে নেই।
জনসভা থেকে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা। একইভাবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু করার দাবিতে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এ কারণে জনসভায় বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নবগঠিত ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র শীর্ষ নেতাদেরও জনসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এদিকে, শনিবারের জনসভার জন্য গতকাল পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতি পায়নি বিএনপি। এরপরও শেষ সময়ে অনুমতি পাওয়া যেতে পারে- এমন সম্ভাবনা সামনে রেখে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জনসভাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
যৌথ সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা জনসভা করতে চেয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওইদিন সভা করা ঠিক হবে না। শনিবার ছুটির দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই জনসভা করুন। সেজন্যই বিএনপি ২৯ সেপ্টেম্বর জনসভা করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ এখন পুলিশের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে- অনুমতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সেদিন মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের সমাবেশ রয়েছে। এরপরও অনুমতির জন্য শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল জানান, শনিবারের জনসভার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যৌথ সভায় তেমন নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার মধ্যে নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং এসব জেলার সব উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের ঢল নামানো হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি সভাপতি কৃষিবিদ ও অ্যাডভোকেট শাসুল আলম তোফা বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া করাগারে রয়েছেন। এই বিষয়টি মাথায় রেখে অতীতের চেয়েও বেশি লোক সমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এজন্য তাদের যা যা করণীয়, তারা করবেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, জনসভা থেকে জাতীয় ঐক্যের জন্য নিজেদের রূপরেখা, প্রস্তাবনা, জাতীয় নির্বাচনের জন্য সহায়ক সরকার ব্যবস্থা এমনকি তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাও জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এই জনসভায় উপস্থিত থাকার জন্য জামায়াতকে বাদ দিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক সব দলকে ইতিমধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন উপস্থিত থাকতে না পারলেও তার দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে গণফোরাম নেতারা নিশ্চিত করেছেন। ড. কামাল হোসেন চিকিৎসার জন্য এ সময়ে সিঙ্গাপুর থাকবেন।
বিএনপির অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এই জনসভার মাধ্যমে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতকে নিয়ে অন্যান্য দলের আপত্তির বিষয়টিরও এক রকম সুরাহা করতে চাইছে দলীয় হাইকমান্ড। এজন্য জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করে পরিকল্পনা নিতে চাইছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে জামায়াতকে না চটিয়ে তাদের সম্মতি নিয়েই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নেতাদের জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির বলে জানা গেছে।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.