দর্পণ ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। অধিবেশনের ফাঁকে এবার তিনি দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা ছাড়বেন। লন্ডনে দুই দিনের যাত্রা বিরতি শেষে আগামী রােববার তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। ৫০ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিদল এবং ২০০ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফর সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী জানান, ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি প্রধানমন্ত্রীকে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দিচ্ছে। এর আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, বুট্রুস-ঘালি ও ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মারটি এহটিসারি ওই পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকটে দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য ‘গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের’ পরিচালনা পর্ষদ প্রধানমন্ত্রীকে ২০১৮ সালের ‘স্পেশাল রিকোগনিশান ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের অধিবেশনে তিনটি ইস্যু প্রাধান্য পাবে। রোহিঙ্গা ইস্যু, বিশ্ব শান্তি ও শান্তিরক্ষা কর্মসূচি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়গুলো তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।
মিয়ানমারের উসকানির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আমাদের উত্তেজিত করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তারা আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, ল্যান্ডমাইন (স্থলমাইন) বসিয়েছে। কিন্তু আমরা ঠাণ্ডা মাথায় এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এবারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সেই ইভেন্টগুলোতে বাংলাদেশ তার উদ্যোগ ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে তুলে ধরবে।
মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ বেড়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার সফরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তর রাখাইনের মংডু, বুথিডংসহ বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমি নিজে দেখেছি, সেখানে বাড়ির গাছপালা পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের মন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের সম্ভাবনারও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে নিউইয়র্কে। সেখানে মিয়ানমারের মন্ত্রীও হয়তো বা থাকবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত জুন মাসে বেইজিং সফরের সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন যে মিয়ানমার পরিস্থিতি দেখে এসে তিনি আবারও তার সঙ্গে কথা বলবেন। বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। নিউইয়র্কেও এমন বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণের পর জাতিসংঘ মহাসচিব। অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সাধারণ পরিষদে ভাষণ ছাড়াও বেশ কিছু হাই লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্ব নেতাদের অনেকের সঙ্গেই তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে আগামী ১ অক্টোবর।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.