দর্পণ ডেস্ক :
বিকেল ৪টার দিকে শাহআলী থানা এলাকার রাইনখোলায় পৌঁছালে জব্দ করা বাসটি হঠাৎ এসআই উত্তম কুমার সরকার (৩৩) এর মোটরসাইকেলের ওপর উঠে যায়। এতে বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় উত্তমের।
গত বৃহস্পতিবার (৩০আগস্ট) দুর্ঘটনার পর ঈগল পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৬৮২৮) দু’দিন আগে থেকে পড়ে ছিল মিরপুরের বেড়িবাঁধে। বিকল সেই বাস ঠিকঠাক করে রোববার নেওয়া হচ্ছিল রূপনগর থানায়। গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক বেলাল হোসেন (৩৮), ছিলেন তার সহকারীও। বাসটির সামনে থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে থানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন রূপনগর থানার এসআই উত্তম কুমার সরকার (৩৪)। উক্ত দুর্ঘটনায় দায়ের করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
শাহ আলী থানার এসআই আতিকুর রহমান বলেন, “বাসটির সাথে উত্তমের মোটর সাইকেল আটকে গেলে চালক তাকে টেনে-হিঁচড়ে বেশ কিছু দূর নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জব্দ করা বাসটি যথেষ্ট পুরোনো ও ভাঙাচোরা। এটি ঢাকা থেকে বরিশাল ও খুলনার পথে চলতো।


এটিকে স্রেফ দুর্ঘটনা হিসেবে দেখতে নারাজ পুলিশ। ইচ্ছে করেই কোনো কারণে চালক উত্তমের ওপর গাড়ি তুলে দিয়েছেন কি-না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। যদিও দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার বাসচালক বেলাল দাবি করেছেন, ‘ব্রেক ফেল’ করার পর বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন তিনি। বারবার চেষ্টার পরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হন। বাসটি মুহূর্তের মধ্যে সামনে থাকা মোটরসাইকেলে চাপা দেয়।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মাসুদ আহম্মদ বলেন, যেভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। চালক দুর্ঘটনার কথা বললেও তদন্তের পরই স্পষ্টভাবে পুরো ঘটনাটি বের হবে।


উত্তম কুমারের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পশ্চিম বেতডোবা কর্মকারপাড়ায়। ২০১২ সালে তিনি পুলিশের এসআই হিসেবে যোগদান করেন। দেড় বছর ধরে রূপনগর থানায় কর্মরত ছিলেন। তার বাসা মোহাম্মদপুরে। স্ত্রী ও চার মাসের মেয়ে উপমাকে নিয়ে থাকতেন সেখানে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ঈগল পরিবহনের বাসটি বেড়িবাঁধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদের পাজেরো গাড়িকে ধাক্কা দেয়। পরে বাসটি জব্দ করে পুলিশ। ওই ঘটনায় রূপনগর থানায় জিডিও করে পুলিশ। এই জিডির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এসআই উত্তম কুমার। রোববার দুপুরে তিনি মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ইউনিফর্ম পরে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িবাঁধে জব্দ করা বাসের কাছে যান। ঈগল পরিবহনের পক্ষ থেকে বাসটির ত্রুটি ঠিক করা হয়। এরপর সেটি থানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়ি চালাচ্ছিলেন একই কোম্পানির অন্য একটি বাসের চালক বেলাল হোসেন। বাসের সামনে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন উত্তম কুমার। বিকেল ৪টার দিকে রাইনখোলায় যাওয়ামাত্র বাসটি উত্তম কুমারের ওপর তুলে দেন চালক। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার পাজেরো গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছিল। জব্দ করা বাসটি আনতে গিয়েই রোববার ওই বাসের চাপায় উত্তম কুমার প্রাণ হারান।
শাহআলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মেহেদী হাসান জানান, নিহতের ভাই দীপঙ্কর সরকার বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৩০৪-এর খ, ২৭৯ ও ৪২৭ ধারায় মামলা করেছেন। এতে চালক বেলালকে আসামি করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন বশির আহমেদ বলেন, ঘটনার দিন পেছন থেকে তার পাজেরো গাড়িকে ধাক্কা দেয় ঈগল পরিবহনের চালক। এতে গাড়িটির পেছনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে দুই লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।


ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফল বিক্রেতা মো. শাহীন বলেন, ঘটনাস্থলেই এসআই উত্তমের শরীর নিথর হয়ে যায়। বাসটির সামনে মোটরসাইকেলটি ছিল বলে সেটি কিছু দূর গিয়ে আটকে যায়। না হলে হতাহত আরও বাড়তে পারত। এরপর তাঁরা চালককে আটক করেন।