অনলাইন ডেস্ক : আজ থেকেই হাটগুলোতে পশুর ঢল নামতে শুরু করবে। তবে গতকাল শুক্রবার থেকেই ২১টি স্থানে পশুহাট বসেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে, বাজারে যত গরু আছে, তা দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভারতীয় গরু বাজারে না এলে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। এবার এখনও ভারতীয় গরু তেমন নেই বলে তারা ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে আশাবাদী।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একাধিক পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটগুলো গতকালও জমে ওঠেনি। পশুর আমদানিও কম। তবে সোমবার নাগাদ হাটগুলো পশুতে সয়লাব হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন হাটে পশু রাখার মতো সুব্যবস্থা না থাকায় খামারিরা আগেভাগে বেশি পশু আনছেন না। নমুনা হিসেবে কিছু জড়ো করেছেন। উট, দুম্বা, ভেড়া, খাসি, মহিষ ও বিভিন্ন জাতের গরু হাটগুলোতে
স্থান পেয়েছে। তবে ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মাঝারি আকারের গরু। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বড় গরু।
গাবতলী পশুহাট ঘুরে দেখা যায়, হাটের পরিধি ব্যাপক হলেও পশুর সংখ্যা কম। এর মধ্যে একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। কালো রঙের বিশালদেহী ওই গরুটির নাম ‘কালা মানিক’। অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরুটি ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড়।
গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেল বেশ কিছু বড় গরু রয়েছে। এগুলোর দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। একটি মাত্র উট উঠেছে, দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। দুম্বা উঠেছে বেশ কয়েকটি। এগুলোর দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা।
দুম্বা বিক্রেতা হোসেন মিয়া জানান, তিনি বেশ কিছু দিন আগে দুম্বাগুলো কেনেন। এগুলো ভারত ও সৌদি আরব থেকে আমদানি করা। বড় দুম্বাটির দাম চাইছেন ৩ লাখ টাকা। তিনি বলেন, এবার পশুর আমদানি কম। কারণ হাটে পশু রাখার মতো অনুকূল পরিবেশ নেই। বৃষ্টি-বাদল হলে পশু রাখতে সমস্যা হয়। এ জন্যই সাধারণত ঈদের দু’দিন আগে পশুর ব্যাপক সমাহার ঘটে।
খামারিরা জানান, ৫৫ কেজির এক বস্তা গমের ভুসির দাম প্রায় দুই হাজার টাকা। ৩৫ কেজির ছোলার খোসার বস্তা দেড় হাজার টাকা। ক্ষুদের কেজি ২২ টাকা। কুড়ো ১০ টাকা, খৈল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কাজেই পশুর দাম কিছুটা বাড়া স্বাভাবিক।
গাবতলী পশুহাটের হাসিল ঘরের ম্যানেজার শান্ত জানান, হাটে ক্রেতা আসছে খুবই কম। অন্য বছর ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই যে রকম বিক্রি হয়, এবার তার চেয়ে কম। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫০-৬০টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। বলেন, ঈদের মূল বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। কামরাঙ্গীরচর সংলগ্ন চেয়ারম্যানবাড়ির হাটের পশু বিক্রেতা খোকন জানান, এক ট্রাক পশু আনতে ভাড়া গুনতে হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া পথে পথে কিছু চাঁদাও দিতে হয়।
গতকাল বেশ কয়েকটি পশুহাট ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্রেতাই দাম জেনে ঘরে ফিরেছেন। কারণ আগেভাগে পশু কিনে বাসাবাড়িতে রাখার মতো বন্দোবস্ত অনেকের নেই। এ জন্য তারা ঈদের এক-দুদিন আগে পশু কিনবেন।
গতকাল সকাল ১০টায় ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে বসেছেন বিক্রেতারা। হাটটিতে পশু আমদানি ভালো হলেও ক্রেতার দেখা নেই। ঝিনাইদহ থেকে আসা বেপারী সিরাজুল ইসলাম এ হাটে এসেছেন দুটি গরু নিয়ে। দুটির দাম হাঁকছেন ১১ লাখ টাকা। তার পাশেই থাকা ঝিনাইদহ থেকে নজরুল বেপারী হাটে এনেছেন ১৬টি গরু। এর মধ্যে একটি গরুর দাম হাঁকছেন ৫ লাখ টাকা। সিরাজুল ইসলাম বলেন, পথে নানা সমস্যা থাকে, সেজন্য আগেভাগেই গরু নিয়ে হাটে এসেছেন তিনি। তবে এখনও ক্রেতা সমাগম হয়নি। ছুটির দিন হওয়ায় কিছু লোক এলেও তারা গরু দেখে চলে যাচ্ছেন।
গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বললেন, ঈদের একদিন বা দু’দিন আগে গরু কিনবেন। এখন হাটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন। জুমার নামাজের পর নয়াবাজার পশুহাটে দেখা যায়, অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গাজুড়ে বসা এ হাটটিও জমে ওঠেনি। কিন্তু রাস্তার ওপরও হাট বসেছে।
হাটটি ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকারের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর মাঝারি আকারের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। বড় গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ২ লাখ থেকে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। খাসির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ভেড়া আছে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা দামের।
বংশালের মকিমবাজার থেকে হাজি সাইদুল হক নাতি ফারিয়াজ মায়ান হককে নিয়ে হাটে এসেছেন পশু দেখতে। তিনি বলেন, নাতির বায়না মেটাতে হাটে এসেছেন। গরু না কিনলেও বাজার যাচাই করছেন। জানালেন, দাম গতবারের চেয়ে বাড়তি। ঈদের দু’দিন আগে গরু কিনবেন। পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজমাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠেও বসেছে পশুহাট। সেখানেও পর্যাপ্ত পশু উঠলেও ক্রেতার সেরকম ভিড় নেই।