অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা কখনই নাই শব্দটা বলতেন না। মায়ের মুখে কোনো সময় অভাব অনটনের কথা শুনতাম না। আমাদের কঠোর নির্দেশ দিতেন, ঘরে কোনো জিনিস না থাকলে নাই বলা যাবে না। ঘরে চিনি না থাকলে বলতেন, ফুরিয়ে গেছে, আনতে হবে। তিনি কখনই দৈন্য, অভাব-অনটন প্রকাশ করতেন না। কখনও হতাশা ছিল না তার মধ্যে।
বুধবার সকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনা মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, মা অনেক উদারমনা ছিলেন। গরীবদের-দলের নেতাকর্মীদের সাহায্য করতে তিনি গহনা বিক্রি করে দিয়েছেন। বলতেন ডিজাইন পুরনো হয়ে গেছে তাই বিক্রি করে দিয়েছি, পরে নতুন বানাব। ঠাণ্ডা পানি খেলে গলা ব্যথা হয় এটা বলে ফ্রিজ বিক্রি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বড় মেয়ে, সব বুঝতাম। মা রাজনৈতিকভাবেও ছিলেন দৃঢ়চেতা। রাজনীতিতে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ গুণটিও তার মধ্যে ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা ছিলেন জ্ঞানপিপাসু। তিনি নিয়মিত বই পড়তেন। নিউমার্কেটে গিয়ে বই কিনে নিয়ে আসতেন। জেলে আব্বাকে বই দিয়ে আসতেন। অনেকসময় আব্বা বইয়ের তালিকা দিতেন। যে অনুযায়ী আম্মা বই কিনে জেলে দিয়ে আসতেন।
তিনি বলেন, মা ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। আমরা ধানমন্ডির বাড়িতে উঠি ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। সেই বাড়িটি করার সময় শ্রমিক খরচ বাঁচাতে আমাদের নিয়ে ইট ভিজানো থেকে শুরু করে দেয়ালে পানি দেয়ার কাজ করেছেন। একটা একটা করে কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। সে জন্য এখনো গিয়ে দেখবেন বাড়িটিতে কক্ষগুলোর মেঝে উঁচু-নিচু।
আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য মা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সংসারের সবকিছু একা হাতে সামলেছেন। কখনই কোনো কিছুর জন্য বাবাকে বিরক্ত করতেন না। বলতেন তুমি তোমার কাজ কর। মা ক্ষমতাটাকে কখনই ভোগ করতে চাননি। বাবা জেলে থাকুন কিংবা মন্ত্রী, মা সবসময় সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার মাকেও ছাড় দেয়া হয়নি। এর মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই আমি ও আমার বোন বিদেশে গিয়েছিলাম। তখনই ভাবতেই পারিনি মা’কে আর কখনো মা বলে ডাকতে পারবো না। ছয় বছর শরণার্থী হয়ে জীবনযাপন করেছি। আপনারা সবাই আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন।