দিবাকর সরকার, কলাপাড়া প্রতিনিধি : বসতঘরে ঢুকে দিনের বেলা ১৫/১৬ সন্ত্রাসীর নারকীয় তান্ডব ভাংচুরের ঘটনায় মামলা করে এখন চরম বিপাকে পড়েছেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মান্নান তার বৃদ্ধ বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজনের তিন পরিবার। পুলিশ প্রহরায় এরা এখন উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দরিয়াপুর গ্রামের নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করছে।

এসব পরিবারের সদস্যদের জমিজমা চাষাবাদ, উৎপাদিত সবজি বেচাকেনা পর্যন্ত করতে পারছেনা। উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে পরিবার গুলো। জীবন-জীবিকার কথা বাদ দিয়ে এখন এরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য উপায়হীন হয়ে পড়েছেন। পরিবারের অন্তত ৩০ নারী-পুরুষ বুধবার বেলা ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবে এসে নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নারী-পুরুষের কান্না আর আহাজারিতে আবেগপ্রবণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা মান্নানের ছেলে ফয়সাল শরীফ। তিনি জানান, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হওয়ার পর থেকে তার বাবাকে কয়েক দফা লাঞ্চিত করেছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার। ২১ জুলাই তার ক্যাডার বাহিনী মাওলানা মন্নানকে বেধড়ক মারধর করে। বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা করায় ২৯ জুলাই বিকেলে সন্ত্রাসী জুলহাস, ফারুক, আবু সালেহ, ইলিয়াস, জহির, মিরাজ, কেনান, আল-আমিন, সাদ্দামসহ ১৫-১৬ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রথমে বয়োবৃদ্ধ মাওলানা মান্নানের বাবা মোতালেব শরীফকে লাঞ্চিত করে। করে মারধর। এখানেই শেষ নয়। বসতঘরের দরজা-বেড়া ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্রসহ সব কুপিয়ে ভাংচুর করে লন্ডভন্ড করে দেয়। এদের ভয়ে ঘরের দোতলায় আশ্রয় নেয়া মাওলানা মান্নানের স্ত্রী আঞ্জুমান আর এবং ছোট ভাই হাকিম শরীফ কোনমতে নিজেদের রক্ষা করে। তাদের ভাষ্য,‘ নুনের বাটি পর্যন্ত ভাইঙ্গা ফালাইছে।’ দুই/তিন ঘন্টা ভাংচুর তান্ডবের পরে টাকা-পয়সা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে নির্বিঘেœ চলে যায়। পরে পুলিশ গেলে সটকে পড়ে।

এ ঘটনার পর থেকে মাওলানা মান্নানের গোটা পরিবার চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। প্রতি রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এসব পরিবার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তাদের অসহায়ত্ব এবং নিরাপত্তাহীনতার কথা বলতে গিয়ে কান্না জুড়ে দেন। তারা এখন তাদের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষও এ ঘটনায় হতবাক বনে গেছেন। তবে থানা পুলিশের ভুমিকায় এসব মানুষ স্বস্তিবোধ করছেন। তাদের কাছে ভরসাই পুলিশ।

তারপরও সকল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় হুমকিতে তটস্থ রয়েছেন সবাই। ছোট্ট শিশুদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। যেন এক ভয়াবহ শঙ্কায় পড়েছেন এই তিন পরিবারের লোকজন। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এজাহারভুক্ত একজনসহ মোট তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ওই বাড়িসহ সমগ্র এলাকায় পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জানা গেছে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আক্কেলপুর মাদ্রাসার নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের সঙ্গে চরম বিরোধ চলে আসছিল। রুহুল আমিন জানান, মাওলানা মান্নান তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। উল্টো এরা সবাই জামায়াতের লোকজন দাবি করেন। তবে বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় নিজে জড়িত নন বলেও দাবি করেন।