অনলাইন ডেস্ক : টেস্ট সিরিজে নাজেহাল হয়েছিল তো এ দলটিই। আফগানদের বিপক্ষে টি২০ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল তারাই। এ দলটিই মাশরাফি মুর্তজার ছোঁয়ায় পুরোপুরি বদলে গেল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। মাশরাফির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো, পুরো দলটিকে এক সুতোয় বেঁধেছেন, উজাড় করে দেওয়ার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। মাশরাফি নামের জাদুর কাঠির স্পর্শে অদম্য হয়ে উঠল টাইগাররা। আর তাতেই উড়ে গেল গেইল-লুইস-রাসেলদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট সিরিজের বিভীষিকা কাটিয়ে ৪৮ রানের স্বস্তির এক জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে দুঃস্বপ্নের টেস্ট সিরিজের পর এমনিতেই হতাশায় ডুবে ছিল বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে আবার ওয়ানডে সিরিজ শুরুর দু’দিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বিতর্কিত মন্তব্যে আরও খোলসের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল ছিল দল। এমন অবস্থায় দলকে উদ্বুদ্ধ করা কি চাট্টিখানি কাজ! সে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন বলেই হয়তো পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে মাশরাফির কাছে সঞ্চালক ড্যানি মরিসন জানতে চাইলেন দলকে উজ্জীবিত করার রহস্য। মাশরাফিকে দেখে অবশ্য মনে হয়নি যে, এটা বিশেষ কিছু। স্মিথ হেসে ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’ জবাব দেন, ‘বিশেষ কিছু বলিনি। হৃদয় উজাড় করে দেশের জন্য খেলতে বলেছি। আর যা হয়ে গেছে, তা তো অতীত। এটা নতুন সিরিজ। শুরুটা ভালো করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ ঠিক সেটাই হয়েছে। আশা করি এই পারফরম্যান্স আমরা ধরে রাখতে পারব।’ হৃদয় উজাড় করে খেলার কথা সবাই বলেন; কিন্তু মাশরাফির বলার মধ্যে বাকিদের সঙ্গে তফাৎ আছে। দলের সবাই জানেন, এই মানুষটা যা বলেন তা বিশ্বাস করেন এবং হৃদয় দিয়ে বলেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার নজিরটা তিনি সব সময় সবার সামনে সবার আগে স্থাপন করেন। প্রথম ওয়ানডেতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে বলতে গেলে অনুশীলনই করতে পারেননি। তার পরও এই ৩৪ বছর বয়সে যে বোলিংটা করলেন, সেটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

২০০৭ বিশ্বকাপে গায়ানার এই প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে তারা হারিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সে জয়ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে বলে মনে করছেন মাশরাফি, ‘২০০৭ বিশ্বকাপে এখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এখনও মনে আছে। এবার এখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেললাম। এখানকার উইকেট অনেকটা আমাদের দেশের মতোই। তাই মানিয়ে নিতে সহজ হয়েছে। তবে শুরুতে ব্যাটিং করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তামিম ও সাকিব দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। তারা ভিতটা তৈরি করে দিয়েছে। শেষে মুশফিকের ছোট ইনিংসটি ছিল অসাধারণ। আর আমরা জানতাম, বোলিংয়ের শুরুটা ভালো হলে এখানে ২৮০ রান তাড়া করা কঠিন হবে। আমাদের চাওয়া ছিল গেইল ও লুইসকে দ্রুত ফেরানো। সেটি হয়েছে। এরপর আমরা কেবল চাপটা ধরে রেখেছি।’

গায়ানায় মন্থর গতিতে শুরু করেও শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ২৭৯ রান তোলে টাইগাররা। এ স্কোর গড়া সম্ভব হয়েছে তামিম-সাকিবের রেকর্ড জুটি ও শেষ দিকে মুশফিকুর রহিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। দ্বিতীয় ওভারেই এনামুল হক বিজয় আউট হয়ে গেলে তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব। পঞ্চম ওভারে আবার নামে বৃষ্টি, শুরু হয় ঝড়ো বাতাসও। আধঘণ্টা পর আবার খেলা শুরু হলেও কন্ডিশন তখন পুরোপুরি পেস-সহায়ক হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে আউটফিল্ডও ভিজে ভারি হয়ে গেছে। সে সময়টাতে ক্যারিবিয়ান স্পিনাররাও চমৎকার টার্ন পেতে শুরু করেছিলেন। তাই তখন উইকেটে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। সব বিপদ সামাল দিয়ে তামিম ও সাকিব দ্বিতীয় উইকেটে রেকর্ড ২০৭ রান যোগ করেন। তামিম সেঞ্চুরি করলেও সাকিব ৯৭ রানে আউট হয়ে যান। তাদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে শেষ তিন ওভারে ঝড় তুলেছিলেন মুশফিক।

এই রান তাড়া করার জন্য ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত সূচনা। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিং করে গেইল ও লুইসকে রীতিমতো উইকেটে বেঁধে রাখেন মাশরাফি-মিরাজরা। রানের জন্য হাঁসফাঁস করা লুইস ক্যাচ দিয়ে আসেন মাশরাফিকে তুলে মারতে গিয়ে। ক্যারিবীয়রা সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় গেইলের রান আউটে। স্বভাববিরুদ্ধ রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললেও গেইল যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণই আশা ছিল স্বাগতিকদের। তিনি রান আউট হয়ে যান। এরপর মাশরাফি ও মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৬৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ক্যারিবীয়রা। শেষ উইকেটে বিশু ও জোসেফ ৪৯ রান যোগ করলেও সেটা ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা।