সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে। সাম্প্রতিক সহিংসতার পর ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের পুনর্বাসন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের আস্থা বৃদ্ধির জন্য সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে ২০ হাজার ৬১৯ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ১০২টি মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সরকার ও দলের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ সহায়তা, খাদ্য, কাপড়, অন্যান্য নিত্যপণ্য এবং গৃহনির্মাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। গণভবনে তার সরকারি বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের সহায়তা করছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এবং কাউকে তা নস্যাৎ করতে দেওয়া হবে না।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৩৭টি জেলা ও তিনটি মহানগরীতে মোট ১১৭ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চব্বিশ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ তাদের দেশব্যাপী ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেকোনো সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা রোধ করতে সহায়তার নির্দেশ দিয়েছে। দলটি ইতিমধ্যেই সহিংসতার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এবং কাউকে তা নস্যাৎ করতে দেয়া হবে না। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়াগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপকসহ দুই ডজনেরও বেশি লোককে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশনসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে এবং নিজ নিজ এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে এবং এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় রোববার ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করবে। এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম পবিত্র কোরআন শরীফের অবমাননার অভিযোগে যেখান থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লার সে স্থান পরিদর্শন করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। সে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখে বলে জানা যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. এ আওয়াল হাওলাদার বলেন, এ মন্ত্রণালয় বিগত কয়েকদিন ধরে প্রধান ধর্মগুলোর ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শান্তি বজায় রাখার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি ও লোকজনকে অনুপ্রাণিত করতে পরামর্শ দেন। এদিকে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রংপুরের পীরগঞ্জে জেলে পল্লীর ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যান এবং ৬১ পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে টাকা দেন। পাশাপাশি তিনি শিশু খাদ্য ও গবাদিপশুর খাবার বিতরণ করেন। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গ্রামে লোকজন হামলা চালায় এবং তাদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের জন্য মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে একশ’ বান্ডেল ঢেউটিন, ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য চার লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং এক হাজার দুইশ’ প্যাকেট খাদ্য বরাদ্দ করেছে। রংপুর জেলা প্রশাসন রোববার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ পরিবারের মধ্যে নগদ ৯ লাখ টাকা এবং একশ’ বান্ডেল ঢেউটিন বিতরণ করেছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দিতে অনেক ক্যাম্প স্থাপন করেছে যাতে তাদের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে না হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পীরগঞ্জ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের দেখতে যান এবং সহিংসতা ও হামলার শিকার হওয়া প্রত্যেক হিন্দু পরিবারের মাঝে পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পরিবারকে নগদ টাকা, খাদ্য ও বস্ত্র দেয়া হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্রীয় টিম দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে খুব শিগগিরই সারা দেশ সফর করবেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু এবং হুইপ আবু সাঈদ আল-মাহমুদ স্বপনসহ অন্য সংসদ সদস্যরা রংপুরের ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যান।