গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার অভ্যন্তরে প্রবাহিত চিংগড়িয়ার খাল। এখনও অন্তত ৬-৭ ফুট গভীর পানি। অথচ ১৯৮৬-৮৭ সালে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে (এক একর ৫৫ শতক) ব্যবসায়ী রবিন্দ্র নাথ হাওলাদারকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এসএ নক্সায় এখনও ৮৪২ নম্বর দাগটি খাল রয়েছে। বাস্তবেও তাই।
খালটির দুই পাড়ে পৌরসভার অন্তত: ৪০০ পরিবার এখন চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন। বন্দোবস্ত গ্রহীতা খালের মধ্যে তিনটি বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করে দেয়ায় মানুষ এমন বিপাকে পড়েছেন।
এরআগে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ১৯৯৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির মাধ্যমে এ কেসটি বাতিল করে দেয়। ’৯৩ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেছেন, বিধি বহির্ভূতভাবে জনসাধারনের ব্যবহার্য রেকর্ডীয় খালের জমির শ্রেণি গোপন করে নাল জমি হিসাবে বন্দোবস্ত প্রদান করায় এ বন্দোবস্ত কেসটি বাতিল করা হইল এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে উল্লেখিত জমি সরকারের খাস দখলে এনে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ দেয়া হয়।
পরবর্তীতে আদালতে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে খতিয়ানটি ২০১১ সালে আবার বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করে পুনর্বহাল করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এখনও খালটিতে বুক সমান পানি বিদ্যমান।

স্থানীয় বাসিন্দা খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমানউল্লাহ মিয়া জানান, এই খালটি এখন জনস্বার্থে সচল না করলে আশপাশের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতায় আটকে যাবে। মহল্লার মানুষ বসবাস
উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। বর্তমানে ময়লা-আবর্জনা আটেক যায়। খালটির সঙ্গে আন্ধারমানিক নদীর স্লুইস খালের সংযোগ রয়েছে।

এদিকে মাত্র ৭৭৫ টাকার সেলামিতে এ খাল বন্দোবস্ত নিয়ে এখন কোটি টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তাও কয়েকটি বাঁধ দিয়ে পকেট করার মধ্য দিয়ে। রহমতপুরের একাংশ এবং কবি নজরুল ইসলাম সড়কের বাসিন্দারা এখালটি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মানব বন্ধন করেছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) নির্বাহী প্রধান, সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান খালটি রক্ষায় একটি লিগ্যাল নোটিশ করেছেন। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর এ নোটিশ দেয়া হয়। তখন ভূমি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ ও বন, পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিবগণ, পরিবেশ অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলাপাড়া, কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এ নোটিশ দেয়া হয়।
নোটিশে চিংগড়িয়ার খালটির পানির মূল ¯্রােতধারা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। জনস্বার্থে খালটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যর্থ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে এক পশলা ভারি বর্ষণে গোটা মহল্লার শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েন। দুরাবস্থার যেন শেষ নেই।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু মন্ডল জানান, ভূমি অফিসে যেসব অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে ইতোমধ্যে সেগুলোর বাতিল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কৃষকের সমস্যা হয় এবং ত্রটিপুর্ণ বন্দোবস্ত কেস তদন্ত স্বাপেক্ষ বাতিল করে সরকারি খাল নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।