গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী সংবাদদাতা: আড়াই বছরের শিশু আব্দুল্লাহ। গত ৩১ জুলাই পেটে প্রচন্ড ব্যাথা এবং পেট ফুলে উঠলে তাকে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন পরিবার। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিন্ময়
হালদারের তত্ত্বাবধানে তিনদিন পর্যন্ত চিকিৎসা চলে তার। কিন্তু অবস্থার
উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সোমবার পটুয়াখালী নিয়ে ডাক্তার
মিজানুর রহমানকে দেখান। অনেকগুলো টেস্ট করেও নিশ্চিত হতে না পেরে তার
সহকর্মী অন্য ডাক্তারদের নিয়ে বোর্ড গঠন করে নিশ্চিত হন শিশুটির নাড়ে
প্যাঁচ পড়েছে। ডাক্তার শিশুটিকে দ্রুত বরিশাল নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ধার
কর্য করে কলাপাড়া এবং পটুয়াখালী চিকিৎসা করিয়ে টাকা পয়সা না থাকায় ছেলেকে
নিয়ে কলাপাড়া চলে আসেন বাবা। শিশুটির বাবা ফকু মৃধা নিতান্তই গরীব ও
অসহায়, অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন । গ্রামের বাড়ী কলাপাড়া
উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে। পৌর শহরের রহমতপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার
নিয়ে থাকে। রহমতপুর এলাকার রুস্তুম আলী খলিফা এলাকাবাসী এবং বন্ধুদের
সহায়তায় মঙ্গলবার দশ হাজার টাকা উঠিয়ে এম্বুলেন্স ভাড়া করে বরিশাল শের-ই
বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান শিশুটিকে। এরপর বরিশাল মেট্রোপলিটন
পুলিশ ইনস্পেক্টর এইচএম আবদুর রহমান মুকুল তাকে দ্বায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসার
ব্যবস্থা করেন।

রুস্তম খলিফা জানান, সোমবার রাত এগারোটায় এলাকার একজন বিষয়টি আমাকে
জানালে আমি গিয়ে পরিস্থিতি খারাপ দেখতে পাই। এরপর আমি বরিশালে বসবাসরত
বন্ধু সোহেলকে ফোন করি। ও পটুয়াখালী থাকায় বিকাশ এবং জাহিদকে ফোন করি।
জাহিদ পুলিশ ইনস্পেক্টর আবদুর রহমান মুকুলের সাথে বিষয়টি আলাপ করো। এরপর
ইনস্পেক্টর মুকুলকে বিষয়টি  জানালে তিনি দ্বায়িত্ব নিয়ে তাদের বরিশালে
পাঠাতে বলেন। বরিশালে পাঠালে বন্ধু মুকুল নিজের টাকা খরচ করে সকল
ব্যাবস্থা করে অপারেশন সম্পন্ন করান। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসা সম্পন্ন
করিয়ে আবদুল্লাহকে বাড়িতে নিয়ে আসতে এখনও ৪০হাজার টাকা প্রয়োজন।

শিশুটির বাবা ফকু মৃধা জানান, আমার আরও একটি ছেলে চিকিৎসার অভাবে মারা
গেছে। রুস্তম ভাই এবং মুকুল স্যার না থাকলে আবদুল্লার চিকিৎসা করাতে
পারতাম না। বরিশাল সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের ব্যাবস্থা না থাকায়
প্রাইভেট ক্লিনিকে ৯০ হাজার টাকা চায়। পরে মুকুল স্যার ডায়াবেটিক
হাসপাতালে ডাক্তারদের সাথে কথা বলে ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে অপারেশনের
ব্যাবস্থা করেন। তিনি আরও জানান ডাক্তার বলেছেন আবদুল্লাহর পেটে হাতের
মতো একটা অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে নাড়ীভুঁড়ি চেপে ধরতো। অপরেশনের
পরে সে এখন আশংকামুক্ত বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ইন্সপেক্টর (ইনচার্জ)ক্রাইম এ্যন্ড অপস
(বিপিএম)এইচ,এম আবদুর রহমান মুকুল(পিপিএম) জানান, বন্ধু রুস্তম
এম্বুলেন্স ভাড়া করে বরিশাল পাঠালে আমি বাচ্চাটিকে শেবাচিম হাসপাতালের
শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানান ওর
অবস্থা ভালো নয়, পেট ফুলে উঠেছে, বাচ্চাটির আজই অপারেশন লাগবে। এক ব্যাগ
বি পজিটিভ রক্তও লাগবে। সহকর্মী পুলিশ অফিসার দিবাকর’র মাধ্যমে পুলিশ
সহকর্মী মোঃ রুহুল আমিন’র বি-পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করি। শিশুটিকে জরুরী
ভিত্তিতে ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করে দ্রুত অপারেশন শুরু করার
ব্যবস্থা করি। এ কাজে আমার সহায়তা করার জন্য আামার পুলিশ সহকর্মী, বন্ধু
রুস্তম, সোহেল, জাহিদ, বিকাশসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে চলমান
করোনা মহামারীর মধ্যেও ডাক্তার জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করায় কৃতজ্ঞতা
জ্ঞাপন করছি।